রৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টি রৌদ্রবৃষ্টি রৌদ্রবৃষ্টি রোদ্রবৃষ্টি
   
 
  বিষমুক্ত পৃথিবী ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব

বিষমুক্ত পৃথিবী ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব  
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ                               
              
দেশে খাদ্যের জন্য হাহাকার পড়েছে। প্রতিদিন খাদ্য নিয়ে নানা কথা নানা আলোচনা চলছে।  কেউ একে বলছেন আগাম দুর্ভিক্ষ, কেউ বলছেন নীরব দুর্ভিক্ষ। আবার কেউ একে আক্ষায়িত   করেছেন ‘হিডেন’ বা লুকানো দুর্ভিক্ষ বলে। তবে এটা সত্য যে দেশের মানুষ এক মুঠো খাদ্য সংগ্রহ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্য একদিকে আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখে, রোগশোক থেকে রক্ষা করে, অন্যদিকে খাদ্য আমাদের নিজস্ব জীবন যাপন এবং সংস্কৃতিরও ধারক ও বাহক।  মানবজাতির আদি সভ্যতার সূতিকাগার হোলো কৃষি। মানুষ প্রথম সভ্যতার বীজ বপন করে শষ্য  উৎপাদনের মাধ্যমে। সে তার নিজস্ব প্রয়োজনে নিজস্ব আঙ্গিকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য খাদ্য উৎপাদন শুরু করেছিলো। মানুষের সভ্যতার সাথে সাথে কৃষির শতস্ফুর্ত সভ্যতাও সমান্তরাল ভাবে এগিয়ে গেছে। এই কৃষি সভ্যতার সামান্য বত্যয় ঘটলে মানুষের সভ্যতারও বত্যয় ঘটে। কৃষিকে তিগ্রস্থ কিংবা অবজ্ঞা করে কোনো সভ্যতা টিকে থাকতে পারেনা । আমরা দেখতে পাই আদিকাল থেকে এই কৃষি উৎপাদনের সাথে মানুষের মূল্যবোধ ও একটি দর্শনও জড়িত রয়েছে । এটা হোলো সে শুধু তার নিজের জন্যই উৎপাদন করেনা সে তার জনগোষ্ঠীর জন্যও  খাদ্য উৎপাদন করে। খাদ্য গ্রহন করে সে যেমন নিজে বেঁচে থাকে আবার অপরকেও বাঁচিয়ে রাখে। সুতরাং এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা যায়, খাদ্য উৎপাদনের সাথে মুনাফার কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে জড়িত রয়েছে এক গভীর মুল্যবোধের প্রশ্ন। এ মুল্যবোধই তাকে মানুষ হিসাবে চিহ্নিত করে দেয়। মানুষ একই সাথে তার নিজের খাদ্য উৎপাদন করে এবং অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যও সে নিশ্চিত করে। খাদ্যের সার্বভৌমত্ব  হোলো নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদন করা এবং সেই খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখা। এর জন্য তার পরিবেশের দিকেও তাকে নজর রাখতে হয়।  তাই কৃষি উৎপাদন শুধু খাদ্য উৎপাদনই নয় এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রকৃতি প্রতিবেশ পরিবেশ এবং অন্যান্য প্রাণী জগতের সাথে নিবীড় সম্পর্ক। এ সমস্ত কিছুর সাথে সম্পর্ক রেখেই খাদ্য উৎপাদন করে মানুষের সভ্যতা চলমান রয়েছে। খাদ্যে সার্বভৌমত্ব হচ্ছে কৃষকের নিজ এলাকার পরিবেশ, সংস্কৃতি ও কৃষি পদ্ধতির সাথে সঙ্গতি রেখে উৎপাদন ও জনগনের খাদ্য পাবার অধিকার । এই অধিকারের মধ্যে নিরাপদ,পুষ্টি সম্মত এবং নিজ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল খাদ্যের কথা আছে। খাদ্যে সার্বভৌমত্বের  অধিকার একই সাথে জমি পানি বীজ এবং সকল প্রাকৃতিক সম্পদেরও অধিকার বুঝায়। কৃষিতে নারীর অবদান এবং সক্রিয় অংশগ্রহনের  সম্পূর্ন  স্বীকৃতিও এর সঙ্গে বুঝায়। কিন্তু বর্তমানে কর্পোরেট পুঁজির ব্যবস্থাপনায় কৃষি একটি শিল্প কারখানায় পরিণত হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানীর মুনাফার ল্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে কৃষি। এর ফলে  এই অধিকার এখন খর্ব হতে বসেছে। যদিও  খাদ্যে সার্বভৌমত্ব মৌলিক  অধিকার হিসাবে বহু আন্তর্জাতিক সনদে স্বীকৃত কিন্তু তবুও বিশ্বের বহু দেশ এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের পঞ্চাশ কোটি লোক যারা কৃষক ও সরাসরি উৎপাদক হিসাবে কাজ করছে তারা পুষ্টি হীনতার শিকার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি  সংস্থা( ফাও) মনে করে, এই চিত্র খাদ্য ঘাটতির কারনে হচ্ছে না বরং কৃষক ও গরিব মানুষ সহ খাদ্য উৎপাদক গোষ্ঠীর জমি সম্পদের উপর অধিকারহীনতা এবং খাদ্য সরবরাহে ত্রুটি ও সময় সঠিক মত খাদ্যের যোগান হচ্ছেনা বলেই ঘটছে।
২০০২সালে জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (ফাও) আয়োজিত বিশ্ব খাদ্য সম্মেলন +৫-এ বিশ্বের  সরকার এবং রাষ্ট্র প্রধানরা ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্রের  বিরুদ্ধে একটি অঙ্গীকার ও প্রস্তাব গ্রহন করেছে । অনেকেই মনে করছেন, তা বাস্তবে একটি অবাস্তব প্রস্তাব হিসাবে পরিগনিত হয়েছে। পৃথিবী ব্যাপী ক্ষুধা ও অপুষ্টি বাড়ছে এবং তা বিশ্ব জুড়ে বানিজ্য উদারিকরনের ফলেই ঘটছে। বিশ্ব ব্যংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আই এম এফ) এর বানিজ্য উদারিকরনের কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচী এশিয়ার গরিব ঋনগ্রস্ত দেশগুলোকে কৃষি ক্ষেত্র বানিজ্য নীতি ও উদারিকরনের আওতায় আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এর ফলে কৃষক, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, নারী ও শিশু সহ সাধারন মানুষ দিনের পর দিন মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত এ অবস্থার পরিবর্তন করা না হবে তত দিন পর্যন্ত ক্ষুধা দারিদ্র অপুষ্টি থাকবেই। বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার খোলা বানিজ্যনীতি এবং গোলকায়নের নানান কৌশল তৃতীয় বিশ্বের অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রনহীন করে তুলছে। যার ফলে কোটি কোটি ক্ষুদ্র কৃষক ভূমিহীন চাষী ক্ষেতমুজুর এবং আদিবাসী জনগন এখনো জমি পায়নি এমনকি তাদের  বেঁচে থাকার নূন্যতম সুযোগ সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তাই নয় এর ফলে খাদ্য উৎপাদনে মানুষের অধিকার মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । জাতীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে খাদ্য সার্বভৌমত্বের চরম হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কৃষকদের সংগঠনগুলো এই সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ গড়ে তুলছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ভুমিকা পালন করছে ভারত ও বাংলাদেশ। কৃষিতে বিষের ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তুলছে মালয়শিয়ার পেষ্টিসাইড একশান নেটওয়ার্ক (প্যান-এপি)।
অধিক খাদ্য উৎপাদনের সস্তা বুলি আউড়িয়ে বহুজাতিক কোম্পানী গুলো কৃষিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। এর সহায়ক শক্তি হচ্ছে বিশ্ব ব্যংক ও এশিয়ান উন্নয়ন ব্যংক। কৃষিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে খাদ্য বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিষাক্ত খাদ্য গ্রহন করে মানুষ দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অপর দিকে শহর গঞ্জ গ্রামে বেঙের ছাতার মত প্রাইভেট কিনিক হাসপাতাল গড়ে উঠছে।
 বিশ্বায়নের মাধ্যমে মহাদেশীয় কর্পোরেশন গুলি ফায়দা লুটছে। তারা কৃষি কেমিক্যালস বীজ ও খাদ্য শিল্পের ব্যপারে কৌশল নির্ধারন করছে ও এক চেটিয়া ব্যবসায়িক প্রভাব বিস্তার করছে। এতে অপ্রয়োজনীয় তিকর কৃষি সামগ্রী অবাধে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ভাবে খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্ব হারাচ্ছে। তারা বিশেষ করে গরীব দেশে দেশে অবাঞ্ছিত ভাবে খাদ্য মওজুদ গড়ে তুলছে। কৃষি শিল্পের প্রসারের সাথে সাথে এবং রপ্তানীমুখী শষ্য উৎপাদনের ফলে অধিকতর কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে কৃষক শ্রমিক ভোক্তা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং আমাদের খাদ্য, জমি, বাতাস ও পরিবেশ বিষাক্ত হচ্ছে।
মহাদেশীয় কর্পোরেশন গুলি জেনেটিক ভাবে উদ্ভাবিত অনুজীব, বীজ ও খাদ্য বিপননের ফলে জনস্বাস্থ্য জীববৈচিত্র্য পরিবেশ ও জীবন ধারনের ব্যপারে  নতুন হুমকী হয়ে দেখা দিয়েছে। এই প্রযুক্তি ভুল ও অনৈতিক বিপনন দ্বারা ভিত্তি স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনের উপর আধিপত্ত বিস্তার করবে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও পেটেন্ট ‘লক্ষ' বীজ সংরনের অন্তরায় যা জনগনের  খাদ্য সার্বভৌমত্বের জন্য সমস্যা। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে উদ্ভাবিত ধান আঞ্চলিক খাদ্য সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী। জমি হচ্ছে খাদ্য, জীবন যাত্রা ও সংস্কৃতির উৎস। বিবেক বর্জিত বৃহদাকার জমির মালিক ও মহাদেশীয় কর্পোরেশন গুলি সরকারের সাহায্যে বানিজ্য উদারনীতি রপ্তানী মূলক খাদ্য ও খাদ্য উৎপাদনে বিকল্প জমি ব্যবহারের ফলে ক্ষুদ্র চাষিগন ও তাদের পরিবার বর্গ জমি হতে বিতাড়িত হচ্ছে। এভাবে জমি দখলও ত্বরান্বিত হচ্ছে। একে একে হারিয়ে  যাচ্ছে খাদ্য স্বয়ংসম্পুর্ণতা, আদি শিক্ষা ব্যবস্থা, বীজ ও প্রাণ বৈচিত্র্য। জমি থেকে কৃষক উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। মৎসজীবীরা  হারাচ্ছে তাদের জীবন ও জীবিকা। জল ও নদী থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে এক বিশাল জন গোষ্ঠী। মহিলারা অধিক হারে দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। অবাধে হচ্ছে সামরিকীকরন। অমানবিক ভাবে হচ্ছে মানব অভিবাসন। বাড়ছে ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা। ভূমিহীনের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এসবের জন্য সচেতন মহল গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে।  এখন পৃথিবী ব্যাপী দাবী উঠছে খাদ্য সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তার জন্য।  যে সব দাবী গুলো এখন খুবই সোচ্চার সে গুলো হলো-
১.সঠিক ভূমি বন্টন নীতি যা ভূমিহীন ও ক্ষুদ্র চাষি কৃষক পরিবারের ছেলে মেয়ে উভয়েই যারা জমিতে কাজ করে বা পূর্বে উৎখাত হয়েছে সকলকে কৃষি উৎপাদনে সাহায্য প্রদান সহ মহাদেশীয় কর্পোরেশনের প্রভাব মুক্ত রাখা অপরিহার্য। সঠিক ভূমি বন্টন নীতিই কেবল খাদ্য সার্বভৌমত্ব, জমি ও খাদ্য বিষমুক্ত এবং সামাজিক ন্যয় বিচারের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।
                ২.কৃত্রিম কীটনাশক যা স্বল্পমেয়াদি অথবা দীর্ঘমেয়াদি এন্ডোক্রাইন জনিত ক্ষতির কারন হতে পারে   তার ব্যাবহার নিয়ন্ত্রন হ্রাস বা পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ন নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন।
               ৩. কর্পোরেশন গুলিকে নিষ্কৃয় করা সহ কীটনাশক বিরোধী আন্দোলনকারীকে সরকার কতৃক হয়রানী বদ্ধ করা আবশ্যক। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতি পূরনের ব্যবস্থা করা দরকার ।
               ৪.ভোক্তা এবং উৎপাদক উভয়ের পক্ষ হতেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (জি,এম) মাধ্যমে উদ্ভাবিত বীজ খাদ্য এবং কৃষিতে অনুজীবের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। অনতিবিলম্বে জি.এম. খাদ্য সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।
৫.কর্পোরেট ও সরকারের জবাবদিহিতা সহ এ্যগ্রো কেমিক্যাল এবং খাবারের উপর যে অন্যায় কর্মকান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার সকল প্রকার অন্যায়ের অবসান করতে হবে।

ষাটের দশক থেকে অধিক খাদ্য উৎপাদনের অজুহাতে কৃষি প্রধান উন্নয়নশীল দেশ গুলিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বিষ ব্যবসায়ী বহুজাতিক কম্পানী গুলো মুনাফার পাহাড় গড়েছে। পৃথিবীকে বিষাক্ত করা হয়েছে। মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছ্। ফলশ্রুতিতে এখন পৃথিবী জুড়ে চলছে খাদ্যের জন্য হাহাকার।

এখন খাদ্যের এ বিষাক্ত আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পৃথিবীর মানুষ মুক্তির পথ খুঁজছে। মানবজাতির আগামী সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এখন জরুরী হয়ে পড়েছে খাদ্য সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। কৃষিতে সার ও বিষ ব্যবহারের ফলে মানুষ সহ সমগ্র প্রাণবৈচিত্র্য হুমকীর মধ্যে পড়েছে। এখন সবার আগে প্রয়োজন পৃথিবীকে বিষ মুক্ত করা।

তথ্যসূত্র: নয়াকৃষি আন্দোলন

 

 

 

 

Mahmudul Huq Foez
 
আপনজন
 
ভালোবাসার একটি গোলাপ
সাতরাজারই ধন,
কোথায় খুঁজিস ওরে ক্ষেপা
এইতো আপন জন।
নীরবতা
 
নীরবে কেটেছে দিবস আমার
নীরবে কেটেছে রাত,
নীরবে হেনেছে হৃদয় আমার
প্রণয়ের অভিসম্পাত।
রঙ
 
রঙ দেখেছো রঙ ?
শাওন রাতের
নিকষ কালো
অন্ধকারের রঙ !
রঙ দেখেছো রঙ !
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
 
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী একটি দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। নোয়াখালী সদরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই চর এলাকা। এখানে বাস করে সাধারন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তাছাড়াও দিনমজুর, রিক্সাশ্রমিক, জেলে প্রভৃতি পেশার মানুষ এখানে বাস করে। খুব কমসংখ্যক নারি কৃষি সহ বিভিন্ন কাজ করলেও তারা মূলত ঘরকন্যার কাজ করে থাকে। ঘর কেন্দ্রিক নানান কাজের সঙ্গেও এরা জড়িত। এইসব নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে শিক্ষার হার খুব কম। জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতাও এদের তেমন নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এরা বেশীরভাগ সময়ে সনাতন জ্ঞান, নিজস্ব ধারনা এবং আকাশের হাবভাব দেখে বুঝতে চেষ্টা করে। প্রায় ক্ষেত্রে এরা নিয়তির উপর নিজেদেরকে সমর্পন করে থাকে। তবে গত কয়েক বছরের বড় ধরনের ঝড় জলোচ্ছাস ও সাম্প্রতিক সিডরের কারনে এদের ভিতর কিছুটা সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এদের অধিকাংশের বাড়িতে রেডিও কিংবা টেলিভিশন নেই। তবে তারা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে রেডিও টেলিভিশন থেকে খবরাখবর পেয়ে থাকে।
গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে অনেক গুলো বড় বড় ঝড় জলোচ্ছাস গর্কী সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে গিয়েছিলো। সে দুর্যোগ গুলোতে প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ‘৫৮.’৬০, ও ‘৭০ এর জলোচ্ছাস এ অঞ্চলে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো। সে সময় এখানকার মানুষ কোনো মাধ্যম থেকে কেনো সংবাদই পেতোনা। সে সময়ের সরকার গুলোও ছিলো এব্যপারে একেবারেই উদাসীন।
নোয়াখালী সদরের সর্বদক্ষিনে হাতিয়া ষ্টিমার ঘাট ও অতিসম্প্রতি বয়ার চরের সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলে ফেরী চলাচলের জন্য চেয়ারম্যান ঘাট নামক স্থানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌপরিবহন সংস্থার একটি পল্টুন স্থাপিত হয়েছে । এখানে হাতিয়া দ্বীপ ও নোয়াখালীর মূল ভূখন্ডের মধ্যে ফেরি যোগাযোগ রয়েছে । এ এলাকায় মেঘনার মোহনায় প্রচুর সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার ও ছোটছোট জেলে নৌকা এসে ভীড়ে থাকে । এই ফেরীঘাটের সুবাদে এখানে একটি জমজমাট বাজার গড়ে উঠেছে। এখানের অনেক জেলে জানিয়েছেন, তাদের অনেকেরই নিজস্ব কোনো রেডিও নেই। যারা চরের কাছাকাছি থেকে সাধারনত: মাছ ধরে থাকে। ছোট নৌকা নিয়ে তারা কখনো গভীর সমুদ্রে যায় না। কখনো কোনো দুর্যোগ দেখলে নদীর হাবভাব বুঝে সাবধানতা অবলম্বন করে। সারাদিন মাছ ধরা শেষে রাতে তারা চেয়ারম্যান ঘাটে কিংবা হাতিয়া ষ্টিমার ঘাটে আসলে লোকমুখে বিভিন্ন সংবাদ পেয়ে থাকে। নদীর কূলের এ বাজার গুলোতে এখন রেডিও তেমন শুনা হয়না। চা দোকান গুলোতে টেলিভিশন আছে । তাই সেখানে কাষ্টমারের ভীড় লেগে থাকে। যে দোকানে টেলিভিশন নেই সে দোকানে লোকজন তেমন যায় না। এসব দোকান গুলোতে বেশীর ভাগ সময় নাটক ও সিনেমা বেশী দেখা হয়। তবে দুর্যোগকালীন সময় সংবাদ বেশী দেখা হয়। এলাকার মানুষদের বদ্ধমূল ধারনা জন্মেছে যে, রেডিও টেলিভিশনে জাতীয় সংবাদ ছাড়া স্থানীয় সংবাদ প্রচারিত হয়না। তাই তারা খুব প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্থানীয় সংবাদ গুলো লোকমারফত পেয়ে থাকে। তবে তা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয়না। দুর্গম অঞ্চলের অনেক মানুষ জানিয়েছেন গত সিডরের সময় তারা লোকমুখে সংবাদ পেয়েছিলেন। সাগরের অবস্থা দেখে তারা সাগর থেকে ডাঙ্গায় চলে এসেছেন, তবে অনেকে উপরে সাগরের কাছাকাছি নিজেদের ঘরেই ছিলেন। অনেকেই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।
জরিপের বিশ্লেষন: কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content) সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ কার্য চালানোর সময় জানা গেছে, এরকম একটি সম্প্রচার কেন্দ্র সন্মন্ধে অনেকেরই ধারনা খুবই অস্পস্ট। এব্যপারে অনেকের কোনো রকম কোনো ধারনাই নেই। তবে বিষয়টি বুঝার পরে সবার মধ্যেই প্রচুর আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তারা সকলেই মত দেন যে এরকম একটি কেন্দ্র এলাকায় খুবই প্রয়োজন।
নোয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলের কয়েকটি এলাকায় মোট ২০জনের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। এখানে মাত্র দুজনের রেডিও এবং মাত্র এক জনের নিজস্ব একটি ছোট্ট টেলিভিশন ও রেডিও রয়েছে। তাদের অবশ্য খবর তেমন শুনা হয়না। রেডিওতে গান এবং টেলিভিশনে নাটক দেখা ও গানশুনা বেশী হয়। নারিদের শুধু নাটক ও গানই শোনা হয়। তবে পুরুষরা মাঝে মাঝে খবর শুনে থাকে। নারিদের মধ্যে খবর শুনার আগ্রহ খুব কম। গত সিডরের সময় পুরুষরা ১০০ শতাংশই রেডিও কিংবা টেলিভিশনে খবর পেয়েছেন কিন্তু ১০০ শতাংশ নারি বলেছেন তারা তাদের স্বামী কিংবা লোকমারফত খবর পেয়েছেন। ৮০শতাংশ বলেছেন তারা ঝড়ের পূর্বাভাষ পেয়ে নিজেদের জায়গায়ই অবস্থান করেন। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলেন বাড়ির নিরাপত্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। যেমন সেখানে কোথাও পানি বা বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের খুবই অসুবিধা পড়তে হয়। তাই অনেকেই সেখানে যেতে তেমন আগ্রহী হয়না। নিয়তির উপরও তারা অনেকাংশে নির্ভরশীল। ১০০ শতাংশ বলেছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়কালে তাঁরা আবহাওয়ার সংবাদ শুনতে চান। ১০০ শতাংশ বলেছেন তাদের অনুষ্ঠান দেখতে সবচেয়ে বেশী আগ্রহ নাটকের প্রতি । তবে বাংলা সিনেমার প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন, কমিউনিটি রেডিও স্থাপিত হলে শিক্ষার উপর সবচেয়ে বেশী অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেয়া উচিত। অন্য ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন শাসন না করলে শিশুদের পড়াশুনা হয়না। তবে তারা এও জানিয়েছেন এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়। এ বিষয়ে শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠান প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা তারা জানিয়েছেন। ১০০ শতাংশ জানিয়েছেন বয়ো:সন্ধিকালীন সময়ে মেয়েদের সমস্যা বিষয়ক সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান বিশেষ ভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে। সবাই মনে করেন এ ব্যপারে মেয়েরা এমন কি অভিভাবকরাও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নন। এ নিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক দ্বিধা কাজ করে। অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন। এথেকে মেয়েরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিষয়ে ১০০শতাংশ জানিয়েছেন মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, সাধারন রোগবালাই, ডায়রিয়া, খাদ্যে পুষ্টিমান, টিকা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা মুলক অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। তবে মাত্র এক জন এইড্‌স বিষয়ে অনুষ্ঠান করার কথা জানিয়েছেন। বাসস্থান বিষয়ে ৭৫শতাংশ জানিয়েছেন, ভূমি ও ভূমির অধিকার বিষয়ে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। অবশ্য এ ব্যপারে পুরুষরাই বেশী আগ্রহী। নোয়াখালীতে তাঁত শিল্পের তেমন কোনো প্রসার নেই। এবিষয়ে কারো তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে ১০০শতাংশই হস্তশিল্প ও নারিদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করার কথা বলেছেন। একজন মন্তব্য করেন এক সময় নোয়াখালীতে প্রচুর তাঁতের প্রসার ছিলো । কিন্তু কালের গর্ভে তা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানে স্থানে যুগীপাড়া ছিলো। সেখানে লুঙ্গি গামছা শাড়ি এসব স্থানীয় ভাবে তৈরী হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও এগুলো বাইরের জেলা গুলোতে চালান হতো। কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে পারলে সেগুলো হয়তো আবার চালু হবে। আশা করা যায় এ থেকে তখন হয়তো এ এলাকার অনেক উন্নতি সাধিত হবে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন কৃষিঋণ, সার, বীজ, উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ, হাঁস মুরগি পালন, কীটনাশক ছাড়া সব্জী চাষ, খাদ্যে পুষ্টিমান ইত্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যম হওয়া উচিত নাটক, কথিকা, জীবন্তিকা ইত্যাদির মাধ্যমে। এরা আরো জানিয়েছেন স্থানীয় ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে সবার কাছে তা গ্রহনযোগ্য হবে। এছাড়াও স্থানীয় ভাষায় নাটক, গান এবং স্থানীয় সমস্যা ও সমাধান ইত্যাদি বেশী বেশী প্রচার হওয়া দরকার বলে সবাই জানিয়েছেন।
উপসংহার:- সার্বিক জরিপে দেখা যায় এ এলাকার জন্য কমিউনিটি রেডিওর অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দুর্গম এ অঞ্চলের মানুষ কাছের খবরটিও সঠিক ভাবে পায়না। কথায় কথায এলাকাবাসী জানায়, ‘‍ইরােক েবামায় মানুষ মরার খবর আমরা সাথে সাথে রেডিও টেলিভিশনে পাই কিন্তু পাশের গ্রামে মড়ক লেগে হাঁসমুরগী মারা গেলে আমরা তার খবর পাইনা‍ অথচ এটি আমাদের জন্য অধিকতর জরুরী’। এখানে এটি স্থাপিত হলে শুধু দুর্যোগকালীন সময়েই নয়, এ কেন্দ্র গ্রামীণ জনগণের সার্বক্ষনিক দিনযাপনের অনুসঙ্গ হয়ে থাকেব। স্থানীয় ভাষায় স্থানীয় আঙ্গিকে স্থানীয় সমস্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে এটি জনগনের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করবে এবং অধিক গ্রহনযোগ্যতা পাবে। এলাকায় সচেতনতা বাড়বে। উপকৃত হবে প্রান্তিক মানুষ।

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
মোবাইল: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@gmail.com

Mail to : massline@bangla.net
masslinemediacenter@yahoo.com



 
সকল সত্ব সংরক্ষিত সকল সত্ব সংরক্ষিত সকল সত্ব সংরক্ষিত This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free