রৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টি রৌদ্রবৃষ্টি রৌদ্রবৃষ্টি রোদ্রবৃষ্টি
   
 
  তৃণ মুলের তথ্য এবং তথ্যের সরলীকরণ


তৃণমুলের তথ্য এবং তথ্যের সরলীকরণ
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

তথ্যের অবাধ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমরা পুর্বের চেয়ে অনেক বেশী সোচ্চার। আধুনিক বিশ্বে মনে করা হয় তথ্যই শক্তি। যার মানে দাঁড়ায়, যার যত বেশী তথ্য ভান্ডার আছে সে ততবেশী শক্তিশালী বা ক্ষমতাবান। এ ধারনা থেকে দ্রুততম সময়ে তথ্য পাওয়ার আকাংখা থেকে মানুষ নির্ভর করছে ইন্টারনেট, প্রযুক্তি, গণমাধ্যম ইত্যাদির উপর। এই সকল যান্ত্রিক ও প্রকৃয়াজাত মাধ্যম গুলো তথ্যের দ্রুতলয়ের চলয়মানতা নিশ্চিত করে। উন্নত বিশ্বের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ তথ্য প্রযুক্তির সাথে দ্রুততার সাথে সংযুক্ত হচ্চেছ। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের এই বাংলাদেশে এখনো এর প্রসার তেমন ঘটেনি। আমাদের সনাতন গ্রামগুলোতে এখনো তথ্য প্রবাহের অবাধ যাতায়াত নেই। তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ নানান সনাতন মাধ্যমের উপর নির্ভর করে । সনাতন জ্ঞান লোকায়ত জ্ঞান ইত্যাদির উপর গ্রামীণ জনগন অনেকটাই নির্ভরশীল। তথ্যকে অন্য অর্থে বলা যায় জ্ঞান। তথ্যই জ্ঞান। কিন্তু সকল জ্ঞানই তথ্য নির্ভর নয়। গ্রামের মানুষ অনেক ক্ষেত্রে নানান কারনে কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে উঠে। এই কুসংস্কার জ্ঞানও বটে। তবে তথ্য সর্বস্ব নয়। তাহলে বুঝা যায় জ্ঞান মানেই তথ্য নয়। সঠিক যাচাই করা খাঁটি তথ্যই জ্ঞান। তাহলে সঠিক তথ্য আমরা কিভাবে পাব? তার কষ্টিপাথরই বা কি? যেখানে প্রযুক্তি পৌঁছেনি। গণমাধ্যম যেখানে নেই, সেখানে মানুষ কিভাবে তথ্য পেয়ে থাকে। প্রান্তিক মানুষেরওতো প্রচুর তথ্যের প্রয়োজন থাকে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ নানান তথ্যের উপর নির্ভর করে। শহরের মানুষ নানান সুযোগ সুবিধার মধ্যে বাস করে। তাদের তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ ও বেশী। কিন্তু গ্রামের মানুষ তা পায়না। তাদের অনেক সময় তথ্য বিভ্রান্তের মধ্যেও পড়তে হয়। এই বিভ্রান্তির ফলে মানুষের শুধু উন্নতিরই ব্যাঘাত ঘটে না, অনেক গ্রামীণ জীবনেও ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। তথ্য গোপনীয়তা শুধু সরকারের মধ্যে বিরাজমান নয়। এ প্রবণতা সংবাদ মাধ্যম সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, সমাজ গোষ্ঠী ব্যক্তির মধ্যেও দেখা যায়। অনেকে সংকীর্ন স্বার্থ হাসিলের জন্য তথ্য গোপনীয়তা সহ তথ্য বিকৃতির ও আশ্রয় নেয়। রাষ্ট্র থেকে তৃণমুল পর্যন্ত এ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সাধারন ভাবে তথ্য আধিকারের কথা যখন আমরা বলি তখন এর আওতায় শুধু সেই সব তথ্যকেই বুঝি, যেগুলো সরকারের ক্ষমতা খর্ব হবার ভয়ে জনগনের কাছ থেকে গোপন রাখতে চায়। জনগনকে জানতে দিতে চায়না। এগুলো দুর্বল সরকারের ইঙ্গিত। দেখা যায় তথ্য আধিকারের সঙ্গে সরকারের একটি    সম্পর্ক রয়েছে। পরাশক্তি গুলোও নানা ভাবে তথ্য গোপন ও বিকৃত করে থাকে। ইরাক আগ্রাসনের আগে বুশ সরকার নির্লজ্জ ভাবে ইরাক সংক্রান্ত অনেক তথ্য বিকৃত ও গোপন করে। যা এখন সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
আবার গ্রামের অনেক চতুর মানুষ তথ্য গোপন ও বিকৃত করে তার কর্ম হাসিল করে। তথ্য বিভ্রাটের ফলে গ্রামের মানুষ প্রায়ই প্রতারিত হয়। বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়টি গ্রামীণ সমাজে অত্যান্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এর জন্য তাদের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটকের শরনাপন্ন হতে হয়। গ্রামীন সমাজে অনেক প্রফেশনাল ঘটকও আছেন। শখের বসেও অনেকে ঘটকের কাজ করেন। এরা বিয়ের উকিল বলেও পরিচিত। এদের কাজ হলো কি করে বিয়ে ঘটানো যায়। এর জন্য তথ্যের হেরফের, গোপনীয়তা, অতিরঞ্জন সব কিছুই করে থাকেন।   সম্প্রতি নোয়াখালীর জাহানাবাজ গ্রামের আবদুর রাজ্জাক নামের এক যুবক বিয়ে করে। ঘটকের মাধ্যমে তার সব তথ্য সরবরাহ করা হয়। আবদুর রাজ্জাকের আত্মীয় স্বজন কনের তথ্য সংগ্রহ করে। একদিন কনে দেখেও আসে। বিয়ের পর বরপক্ষ মহাক্ষ্যাপা । জানাগেলো যে মেয়েকে কনে পক্ষ দেখিয়েছে এই কনে সে মেয়ে নয়। ঘটক বলেছিলো কনে অষ্টম শ্রেণী পাশ করেছিল, কিন্তু আদৌ মেয়েটি কোন পড়ালেখা করেনি। তথ্য বিভ্রাটে পড়ে বরপক্ষ মহা অসন্তু'ষ্ট। ফলে একটা সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ রকম ঘটনা গ্রামঞ্চলে অহরহই ঘটে থাকে। তথ্য আবশ্যই হতে হবে সত্য, বস্তুনিষ্ঠ। সকল ধর্মেরই একটা সাধারণ বাণী হচ্চেছ, ‘সদা সত্য কথা বলিবে’। অর্থাৎ সদা সঠিক তথ্য পরিবেশন করিবে। মিথ্যা বলা মহা পাপ । মানে দাঁড়ায় মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করলে শাস্তি ভোগ করতে হবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও আমরা   সকল সময় সঠিক তথ্য পরিবেশন করতে চাই না। আমাদের জন্ম নিবন্ধন, আয়ব্যয়, সম্পদ সর্বেক্ষেত্রেই আমরা তথ্যের লুকোচুরি করে ফেলি। গ্রামীন হাট বাজারগুলোতে কেনা বেচার সময় তথ্যের উপর নির্ভর করে বাজার সদাই করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তথ্য যাচাইয়ের পন্থাও খুব মজার। গ্রামের গরুর হাটে গিয়ে দেখেছি যারা দুধের গাভী বা হালের বলদ কিনতে চান তারা বিক্রেতার কাছে নানান প্রশ্ন করে তথ্য জানতে চান। হালের বলদ কিনতে এরা জানতে চান । এটি কোন এলাকার গরু , আকার, রঙ, কয়টি দাঁত পড়েছে, গরুর গোবরের গন্ধ কেমন, রঙ কেমন, ইত্যাদি ইত্যাদি।   গাভী কিনতে তথ্য জানতে চান, মা গাভী কত কেজি দুধ দিতো, কয়বার বাচ্চা দিয়েছে, বয়স কেমন, গাভীর রঙ আকারতো আছেই । ক্রেতার পছন্দমত সব তথ্য মিলে গেলে তবে বেচা বিক্রি করার পালা। দেখা যায় আমাদের জীবন যাপন কি শহরের কি গ্রামে সর্বাঙ্গীন ভাবে তথ্যের উপরই নির্ভর করতে হয়। তথ্য যত স্বচ্ছ হবে আমাদের যাপিত জীবন ও তত নির্ঝঞ্ঝাট হবে। নিত্যদিনের ক্রিয়াকর্মে তথ্যের আদান প্রদানে সতর্ক থাকলে আমাদের সমষ্টিক পথ অনেক মসৃন হবে। একটি অন্যন্য জাতি হিসাবেও আমরা পরিগণিত হতে পারি।
তাহলে এর জন্য আমাদের করনীয় কি ! ব্যক্তি জীবনেও এর জন্য আমাদের পরিশীলিত ও ঋদ্ধ হতে হবে। তথ্য হীনতা ও বিকারগ্রস্ত তথ্যের কারনে সমাজ অসঙ্গতি অজ্ঞানতার গ্রাসে নিমজ্জিত হয়।
গ্রামীণ দুর্বল তথ্যপ্রবাহের কারনে শাসক শ্রেণী ও লুটেরা কিছু স্বার্থান্বেষীমহল বিকৃত ও ভুল তথ্য সরবরাহ করে দেয়। ‘বোকার ধান পোকায় খায়’ বলে ব্যপক ভাবে গ্রামীণ চাষীদের কাছে তথ্য প্রচার করে ক্ষতিকর কীটনাশকের রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে বহুজাতিক প্রাণ হত্যাকারী কীটনাশক কোম্পানীগুলো। ফলশ্রুতিতে আমাদের প্রাণবৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। অধিক খাদ্য উৎপাদনের তথ্য প্রচার করে জেনেটিক ফসল বা কৃত্রিমভাবে আবিস্কৃত স্বর্ণালী ধান আমাদের দেশে প্রচলন করে ফায়দা লুটে নিচ্ছে। ফলশ্রুতিতে কৃষকদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিখ্যাত সব স্থানীয় প্রজাতির নানান ধরনের জাত। হারিয়ে যেতে বসছে তাদের ঘরে ঘরে বীজ সংরণের সনাতন জ্ঞান। তাই আমাদের এ দিকেও নজর রাখা দরকার    কে কি কোন উদ্দেশ্যে তথ্য সরবরাহ করছে, তার দিকে যেমন খেয়াল রাখা দরকার, ভুল বিভ্রান্তিকর উদ্দেশ্য প্রণোদিত তিকর তথ্যের প্রতিও আমাদের প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার ।
 

 


Mahmudul Huq Foez
 
আপনজন
 
ভালোবাসার একটি গোলাপ
সাতরাজারই ধন,
কোথায় খুঁজিস ওরে ক্ষেপা
এইতো আপন জন।
নীরবতা
 
নীরবে কেটেছে দিবস আমার
নীরবে কেটেছে রাত,
নীরবে হেনেছে হৃদয় আমার
প্রণয়ের অভিসম্পাত।
রঙ
 
রঙ দেখেছো রঙ ?
শাওন রাতের
নিকষ কালো
অন্ধকারের রঙ !
রঙ দেখেছো রঙ !
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
 
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী একটি দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। নোয়াখালী সদরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই চর এলাকা। এখানে বাস করে সাধারন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তাছাড়াও দিনমজুর, রিক্সাশ্রমিক, জেলে প্রভৃতি পেশার মানুষ এখানে বাস করে। খুব কমসংখ্যক নারি কৃষি সহ বিভিন্ন কাজ করলেও তারা মূলত ঘরকন্যার কাজ করে থাকে। ঘর কেন্দ্রিক নানান কাজের সঙ্গেও এরা জড়িত। এইসব নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে শিক্ষার হার খুব কম। জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতাও এদের তেমন নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এরা বেশীরভাগ সময়ে সনাতন জ্ঞান, নিজস্ব ধারনা এবং আকাশের হাবভাব দেখে বুঝতে চেষ্টা করে। প্রায় ক্ষেত্রে এরা নিয়তির উপর নিজেদেরকে সমর্পন করে থাকে। তবে গত কয়েক বছরের বড় ধরনের ঝড় জলোচ্ছাস ও সাম্প্রতিক সিডরের কারনে এদের ভিতর কিছুটা সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এদের অধিকাংশের বাড়িতে রেডিও কিংবা টেলিভিশন নেই। তবে তারা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে রেডিও টেলিভিশন থেকে খবরাখবর পেয়ে থাকে।
গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে অনেক গুলো বড় বড় ঝড় জলোচ্ছাস গর্কী সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে গিয়েছিলো। সে দুর্যোগ গুলোতে প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ‘৫৮.’৬০, ও ‘৭০ এর জলোচ্ছাস এ অঞ্চলে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো। সে সময় এখানকার মানুষ কোনো মাধ্যম থেকে কেনো সংবাদই পেতোনা। সে সময়ের সরকার গুলোও ছিলো এব্যপারে একেবারেই উদাসীন।
নোয়াখালী সদরের সর্বদক্ষিনে হাতিয়া ষ্টিমার ঘাট ও অতিসম্প্রতি বয়ার চরের সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলে ফেরী চলাচলের জন্য চেয়ারম্যান ঘাট নামক স্থানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌপরিবহন সংস্থার একটি পল্টুন স্থাপিত হয়েছে । এখানে হাতিয়া দ্বীপ ও নোয়াখালীর মূল ভূখন্ডের মধ্যে ফেরি যোগাযোগ রয়েছে । এ এলাকায় মেঘনার মোহনায় প্রচুর সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার ও ছোটছোট জেলে নৌকা এসে ভীড়ে থাকে । এই ফেরীঘাটের সুবাদে এখানে একটি জমজমাট বাজার গড়ে উঠেছে। এখানের অনেক জেলে জানিয়েছেন, তাদের অনেকেরই নিজস্ব কোনো রেডিও নেই। যারা চরের কাছাকাছি থেকে সাধারনত: মাছ ধরে থাকে। ছোট নৌকা নিয়ে তারা কখনো গভীর সমুদ্রে যায় না। কখনো কোনো দুর্যোগ দেখলে নদীর হাবভাব বুঝে সাবধানতা অবলম্বন করে। সারাদিন মাছ ধরা শেষে রাতে তারা চেয়ারম্যান ঘাটে কিংবা হাতিয়া ষ্টিমার ঘাটে আসলে লোকমুখে বিভিন্ন সংবাদ পেয়ে থাকে। নদীর কূলের এ বাজার গুলোতে এখন রেডিও তেমন শুনা হয়না। চা দোকান গুলোতে টেলিভিশন আছে । তাই সেখানে কাষ্টমারের ভীড় লেগে থাকে। যে দোকানে টেলিভিশন নেই সে দোকানে লোকজন তেমন যায় না। এসব দোকান গুলোতে বেশীর ভাগ সময় নাটক ও সিনেমা বেশী দেখা হয়। তবে দুর্যোগকালীন সময় সংবাদ বেশী দেখা হয়। এলাকার মানুষদের বদ্ধমূল ধারনা জন্মেছে যে, রেডিও টেলিভিশনে জাতীয় সংবাদ ছাড়া স্থানীয় সংবাদ প্রচারিত হয়না। তাই তারা খুব প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্থানীয় সংবাদ গুলো লোকমারফত পেয়ে থাকে। তবে তা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয়না। দুর্গম অঞ্চলের অনেক মানুষ জানিয়েছেন গত সিডরের সময় তারা লোকমুখে সংবাদ পেয়েছিলেন। সাগরের অবস্থা দেখে তারা সাগর থেকে ডাঙ্গায় চলে এসেছেন, তবে অনেকে উপরে সাগরের কাছাকাছি নিজেদের ঘরেই ছিলেন। অনেকেই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।
জরিপের বিশ্লেষন: কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content) সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ কার্য চালানোর সময় জানা গেছে, এরকম একটি সম্প্রচার কেন্দ্র সন্মন্ধে অনেকেরই ধারনা খুবই অস্পস্ট। এব্যপারে অনেকের কোনো রকম কোনো ধারনাই নেই। তবে বিষয়টি বুঝার পরে সবার মধ্যেই প্রচুর আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তারা সকলেই মত দেন যে এরকম একটি কেন্দ্র এলাকায় খুবই প্রয়োজন।
নোয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলের কয়েকটি এলাকায় মোট ২০জনের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। এখানে মাত্র দুজনের রেডিও এবং মাত্র এক জনের নিজস্ব একটি ছোট্ট টেলিভিশন ও রেডিও রয়েছে। তাদের অবশ্য খবর তেমন শুনা হয়না। রেডিওতে গান এবং টেলিভিশনে নাটক দেখা ও গানশুনা বেশী হয়। নারিদের শুধু নাটক ও গানই শোনা হয়। তবে পুরুষরা মাঝে মাঝে খবর শুনে থাকে। নারিদের মধ্যে খবর শুনার আগ্রহ খুব কম। গত সিডরের সময় পুরুষরা ১০০ শতাংশই রেডিও কিংবা টেলিভিশনে খবর পেয়েছেন কিন্তু ১০০ শতাংশ নারি বলেছেন তারা তাদের স্বামী কিংবা লোকমারফত খবর পেয়েছেন। ৮০শতাংশ বলেছেন তারা ঝড়ের পূর্বাভাষ পেয়ে নিজেদের জায়গায়ই অবস্থান করেন। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলেন বাড়ির নিরাপত্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। যেমন সেখানে কোথাও পানি বা বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের খুবই অসুবিধা পড়তে হয়। তাই অনেকেই সেখানে যেতে তেমন আগ্রহী হয়না। নিয়তির উপরও তারা অনেকাংশে নির্ভরশীল। ১০০ শতাংশ বলেছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়কালে তাঁরা আবহাওয়ার সংবাদ শুনতে চান। ১০০ শতাংশ বলেছেন তাদের অনুষ্ঠান দেখতে সবচেয়ে বেশী আগ্রহ নাটকের প্রতি । তবে বাংলা সিনেমার প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন, কমিউনিটি রেডিও স্থাপিত হলে শিক্ষার উপর সবচেয়ে বেশী অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেয়া উচিত। অন্য ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন শাসন না করলে শিশুদের পড়াশুনা হয়না। তবে তারা এও জানিয়েছেন এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়। এ বিষয়ে শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠান প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা তারা জানিয়েছেন। ১০০ শতাংশ জানিয়েছেন বয়ো:সন্ধিকালীন সময়ে মেয়েদের সমস্যা বিষয়ক সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান বিশেষ ভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে। সবাই মনে করেন এ ব্যপারে মেয়েরা এমন কি অভিভাবকরাও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নন। এ নিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক দ্বিধা কাজ করে। অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন। এথেকে মেয়েরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিষয়ে ১০০শতাংশ জানিয়েছেন মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, সাধারন রোগবালাই, ডায়রিয়া, খাদ্যে পুষ্টিমান, টিকা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা মুলক অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। তবে মাত্র এক জন এইড্‌স বিষয়ে অনুষ্ঠান করার কথা জানিয়েছেন। বাসস্থান বিষয়ে ৭৫শতাংশ জানিয়েছেন, ভূমি ও ভূমির অধিকার বিষয়ে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। অবশ্য এ ব্যপারে পুরুষরাই বেশী আগ্রহী। নোয়াখালীতে তাঁত শিল্পের তেমন কোনো প্রসার নেই। এবিষয়ে কারো তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে ১০০শতাংশই হস্তশিল্প ও নারিদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করার কথা বলেছেন। একজন মন্তব্য করেন এক সময় নোয়াখালীতে প্রচুর তাঁতের প্রসার ছিলো । কিন্তু কালের গর্ভে তা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানে স্থানে যুগীপাড়া ছিলো। সেখানে লুঙ্গি গামছা শাড়ি এসব স্থানীয় ভাবে তৈরী হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও এগুলো বাইরের জেলা গুলোতে চালান হতো। কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে পারলে সেগুলো হয়তো আবার চালু হবে। আশা করা যায় এ থেকে তখন হয়তো এ এলাকার অনেক উন্নতি সাধিত হবে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন কৃষিঋণ, সার, বীজ, উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ, হাঁস মুরগি পালন, কীটনাশক ছাড়া সব্জী চাষ, খাদ্যে পুষ্টিমান ইত্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যম হওয়া উচিত নাটক, কথিকা, জীবন্তিকা ইত্যাদির মাধ্যমে। এরা আরো জানিয়েছেন স্থানীয় ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে সবার কাছে তা গ্রহনযোগ্য হবে। এছাড়াও স্থানীয় ভাষায় নাটক, গান এবং স্থানীয় সমস্যা ও সমাধান ইত্যাদি বেশী বেশী প্রচার হওয়া দরকার বলে সবাই জানিয়েছেন।
উপসংহার:- সার্বিক জরিপে দেখা যায় এ এলাকার জন্য কমিউনিটি রেডিওর অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দুর্গম এ অঞ্চলের মানুষ কাছের খবরটিও সঠিক ভাবে পায়না। কথায় কথায এলাকাবাসী জানায়, ‘‍ইরােক েবামায় মানুষ মরার খবর আমরা সাথে সাথে রেডিও টেলিভিশনে পাই কিন্তু পাশের গ্রামে মড়ক লেগে হাঁসমুরগী মারা গেলে আমরা তার খবর পাইনা‍ অথচ এটি আমাদের জন্য অধিকতর জরুরী’। এখানে এটি স্থাপিত হলে শুধু দুর্যোগকালীন সময়েই নয়, এ কেন্দ্র গ্রামীণ জনগণের সার্বক্ষনিক দিনযাপনের অনুসঙ্গ হয়ে থাকেব। স্থানীয় ভাষায় স্থানীয় আঙ্গিকে স্থানীয় সমস্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে এটি জনগনের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করবে এবং অধিক গ্রহনযোগ্যতা পাবে। এলাকায় সচেতনতা বাড়বে। উপকৃত হবে প্রান্তিক মানুষ।

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
মোবাইল: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@gmail.com

Mail to : massline@bangla.net
masslinemediacenter@yahoo.com



 
সকল সত্ব সংরক্ষিত সকল সত্ব সংরক্ষিত সকল সত্ব সংরক্ষিত This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free