|
|
|
মাইজদী যখন নোয়াখালী
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
নোয়াখালীর মত বাংলাদেশে আর এমন কোনো জেলা খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যে জেলার আয়তন প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে নোয়াখালীর উপকূলে প্রতি বছর সাগর থেকে জেগে উঠছে বিপুল পরিমান ভূমি। এর ফলে বেড়ে যাচ্ছে নোয়াখালীর আয়তন। সুপরিকল্পিত ভাবে এ ভূমিকে ঘিরে কোনো সুদুর প্রসারী উদ্যোগ কেউ কখনো নেয়নি। প্রাকৃতিক আর রাজনৈতিক নানান টালমাটালে এ জেলা নানান ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছে। বর্তমানে নোয়াখালীর উপজেলার সংখ্যা নয়টি। এ উপজেলা গুলোর কেন্দ্র বিন্দু নোয়াখালী শহর। তবে এ শহরের ভিন্ন এক যন্ত্রনাদায়ক ইতিহাস আছে। নতুন অনেকে নোয়াখালী শহরে এসে থমকে পড়েন। এখানে নোয়াখালী নামের কিছুই নেই। এ শহরটির নাম মাইজদী শহর। মাইজদী কোর্ট। সরকারি ভাবে বলা হয় নোয়াখালী সদর। কোনো হৈচৈ নেই। সন্ত্রাস বা বড় ধরনের কোনো ক্রাইমও নেই। গ্রাম আর শহরের মিশেল এক ছোট্ট ছিমছাম সোম্য শান্ত শহর। পুরো জেলায় কোনো রুক্ষতা নেই। সমস্ত জেলা জুড়ে শুধুই সবুজের স্নিগ্ধতা। নারিকেল সুপারি আর নানান বৃক্ষের ছায়া ঘেরা জেলা। পঞ্চাশের দশকে মূল নোয়াখালী মেঘনা আর সাগরে বিলিন হয়ে গেলে বৃটিশদের পরিকলপনায় নতুন করে এ শহরের পত্তন হয়। নোয়াখালী শহর যখন ভেঙ্গে যাচ্ছিলো তখন মাইজদী মৌজায় ধান ক্ষেত আর খোলা প্রান্তরে পুরাতন শহরের ভাঙ্গা অফিস আদালত গুলো এখানে এনে স্থাপন করা হয়। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রায় ষোলো একর জুড়ে কাটা হয় এক বিশাল দীঘি। লোক মুখে প্রচলিত হয় বড় দীঘি নামে। সে দীঘির চতুর্দিকে চক্রাকারে বানানো হয় ইট সুরকীর রাস্তা। সে রাস্তাকে ঘিরে বাংলো প্যাটার্ণে তৈরী হয় সরকারী সব দপ্তর। রাস্তার পাশে রোপিত হয়েছিলো বকুল আর জারুল গাছ। কিছুদিন পরে গাছগুলো বড় হলে ফুলে ফুলে পুষ্পিত হয়ে অপরুপ সাজে সজ্জিত হয়ে উঠে। এক অপরুপ রুপে শহর সাজতে থাকে। আশে পাশে নদী ভাঙ্গা বসতিদের বাড়ি ঘর উঠতে থাকে। এক রুচিশীল হারানো শহরের মানুষ গুলো রুচিশীলতা দিয়েই নতুন করে তৈরী করলো সেই সব। একটু একটু করে গড়তে থাকে শহর। গ্রামাঞ্চলের বড়িঘর গুলোও ছিলো সুঠাম ছিম ছাম। দেশের নানান যায়গা থেকে মানুষ জন দেখতে আসতো এ শহরটির রুপ। একটা অলিখিত পর্যটন শহর হিসাবে গড়ে উঠছিলো এটি। কিন্তু এ শহর বাসীর দুর্ভাগ্য সেই সৌন্দর্য সেই সৌষ্ঠব ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকলো। শহর স্থানান্তরের সময় নতুন শহরকে সাজিয়ে তুলতে মাইজদীতে অনেক যায়গা হুকুম দখল করা হয়েছিলো। যেগুলো সরকারের খাস জমি হিসাবে রক্ষিত আছে। মাইজদী শহরের বড় দীঘিকে ঘিরে যে সুন্দর আঙ্গিনা গড়ে উঠেছিলো পরবর্তীতে তাকে নষ্ট করে বস্তির মত গড়ে উঠে সরকারী ভবন। আনেক সরকারী জায়গা দখল করে গড়ে উঠলো দোকানপাট। অথচ সারা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক সরকারী জমি। বড়দীঘি ও তার চতুর্দিকের বকুল জারুলের বৃক্ষ শোভিত এ অঙ্গনকে নষ্ট না করে সে সব খাস জমিতে সরকারী ভবন গুলো নির্মান করা যেতো। এখন সে যায়গা গুলো কিছু বিরান হয়ে আছে আর কিছু অবৈধ দখলদারদের কব্জায় চলে গেছে। কিছু কিছু খাস জমি লুটেরা ভূমি দখলদারদের লোভাতুর দৃষ্টির মধ্যে আছে। পাঁয়তারা চলছে সেগুলোও দখলে নেবার। বড়দীঘি থেকে পানি উত্তোলন করে সারা শহরে পরিবেশন করা হতো। পানির কোনো দুষণ ছিলোনা। স্বচ্ছ পানিতে ভরে থাকতো বড় দীঘি। পরবর্তীতে সে দীঘির কোল ঘেঁসে কিছু ভবন তৈরী হয়। মল মূত্র আর ময়লা আবর্জনায় এখন প্রায় ভরে থাকে এ সুন্দর জলাশয়টি। অবশ্য মাঝে মাঝে কিছু উদ্দ্যোগযে নেয়া হয়নি তা নয়। বিভিন্ন সময় পৌর কতৃপক্ষ এর সৌন্দর্য বর্ধনে কিছুটা উদ্যোগী হয়েছিলো। দীঘির এক পাড়ে মাটি ভরাট করে গাছ লাগিয়ে কিছুটা পার্কের আদল করার চেষ্টা হয়েছে। দীঘির চতুর্পাশে সে পার্ককে ঘিরে লোহার রেলিং দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে পর্যন্তই সার। স্থানে স্থানে কে বা কারা সে রেলিংগুলো খুলে নিয়ে গেছে। তবে এখন যে টুকু অবশিষ্ট আছে তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে শহরবাসি হয়তো কিছুটা স্বস্তি পেতো। কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য অনেকের কাছে এ শহর বেশ সমাদৃত। সে বৈশিষ্টের মধ্যে অন্যতম হলো এ শহর একেবারেই সন্ত্রাস মুক্ত একটি শহর। এ শহরে সন্ত্রাস নেই বল্লেই চলে। দ্বিতীয় এর বৈশিষ্ট হলো এর স্বচ্ছ পরিবেশ । যেহেতু এ জেলায় বড় কোনো মিল কারখানা নেই তাই এর বড় কোনো পরিবেশ দুষণও নেই। সবচেয়ে বড় দিক হলো কোলাহল মুক্ত একটি শহর হিসাবে এখনো এর সুনাম চতুর্দিকে। অনেকে এখানে এসে বাড়িঘর তৈরী করে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে চান। এ জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষ সারা পৃথিবীতে ছড়িযে ছিটিয়ে আছে। তাদের টাকা রেমিটেন্স বেশীর ভাগ জমি কেনার কাজে ব্যাবহার করা হয়। এসব কারনেই দিন দিন এখানের যায়গা জমির দাম বেড়ে যাচ্ছে।। প্রবাসীদের পাঠানো টাকা সঠিক কাজে ব্যাবহার করে এ জেলাকে আরো সমৃদ্ধ করা যেতে পারে। একটি পর্যটন জেলা হিসাবে গড়ে উঠার সব রকম সুযোগ সুবিধাই এ জেলায় বিদ্যমান। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিটি উপজেলার সাথে জেলা শহরের যোগাযোগ অনেক উন্নত। জেলা শহরের কাছাকাছিই রয়েছে কয়টি দর্শণীয় স্থান। এর মধ্যে আছে গান্ধীআশ্রম, বজরা শাহী মসজিদ, সোনাপুর গীর্জা, হরিণারাযন পুর জমিদার বাড়ি, রামভাইয়ের আশ্রম ইত্যাদি। আরো আছে নোয়াখালীর দক্ষিণে বিশাল খোলা প্রান্তর, বন বিভাগের সৃজিত বন। আছে হাতিয়া দ্বীপের দক্ষিনে সমুদ্র থেকে জেগে উঠা নিঝুম দ্বীপ। সবচেযে বড় বিষয় হলো এ জেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ। একটি সবুজ ক্যানভাসের দৃশ্য অবলোকন করতে মানুষ হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দেয়। প্রকৃতি প্রেমিকরা একটু দৃষ্টি মেলে ঘুরে দেখলেই এখানে এসে দেখতে পাবেন বাংলার এক অপরূপ রূপের জনপদ। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে বর্তমান মহাজোট সরকার দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। এ অঞ্চলের উন্নয়নে নতুন সরকারের নানান প্রতিশ্র“তি রয়েছে। এ জেলার উন্নয়নে যে কোনো পরিকল্পনায় পর্যটনের বিষয়টি চিন্তায় থাকলে খুব অল্প খরচেই এ জেলাটি এক অনন্য জেলায় রুপান্তরিত হতে পারে।
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
প্রথম আলো- ৭ ফেব্রুয়ারী ২০০৯
|
|
|
|
|
|
|
ভালোবাসার একটি গোলাপ
সাতরাজারই ধন,
কোথায় খুঁজিস ওরে ক্ষেপা
এইতো আপন জন।
|
|
নীরবে কেটেছে দিবস আমার
নীরবে কেটেছে রাত,
নীরবে হেনেছে হৃদয় আমার
প্রণয়ের অভিসম্পাত।
|
|
রঙ দেখেছো রঙ ?
শাওন রাতের
নিকষ কালো
অন্ধকারের রঙ !
রঙ দেখেছো রঙ ! |
|
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী একটি দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। নোয়াখালী সদরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই চর এলাকা। এখানে বাস করে সাধারন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তাছাড়াও দিনমজুর, রিক্সাশ্রমিক, জেলে প্রভৃতি পেশার মানুষ এখানে বাস করে। খুব কমসংখ্যক নারি কৃষি সহ বিভিন্ন কাজ করলেও তারা মূলত ঘরকন্যার কাজ করে থাকে। ঘর কেন্দ্রিক নানান কাজের সঙ্গেও এরা জড়িত। এইসব নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে শিক্ষার হার খুব কম। জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতাও এদের তেমন নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এরা বেশীরভাগ সময়ে সনাতন জ্ঞান, নিজস্ব ধারনা এবং আকাশের হাবভাব দেখে বুঝতে চেষ্টা করে। প্রায় ক্ষেত্রে এরা নিয়তির উপর নিজেদেরকে সমর্পন করে থাকে। তবে গত কয়েক বছরের বড় ধরনের ঝড় জলোচ্ছাস ও সাম্প্রতিক সিডরের কারনে এদের ভিতর কিছুটা সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এদের অধিকাংশের বাড়িতে রেডিও কিংবা টেলিভিশন নেই। তবে তারা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে রেডিও টেলিভিশন থেকে খবরাখবর পেয়ে থাকে।
গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে অনেক গুলো বড় বড় ঝড় জলোচ্ছাস গর্কী সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে গিয়েছিলো। সে দুর্যোগ গুলোতে প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ‘৫৮.’৬০, ও ‘৭০ এর জলোচ্ছাস এ অঞ্চলে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো। সে সময় এখানকার মানুষ কোনো মাধ্যম থেকে কেনো সংবাদই পেতোনা। সে সময়ের সরকার গুলোও ছিলো এব্যপারে একেবারেই উদাসীন।
নোয়াখালী সদরের সর্বদক্ষিনে হাতিয়া ষ্টিমার ঘাট ও অতিসম্প্রতি বয়ার চরের সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলে ফেরী চলাচলের জন্য চেয়ারম্যান ঘাট নামক স্থানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌপরিবহন সংস্থার একটি পল্টুন স্থাপিত হয়েছে । এখানে হাতিয়া দ্বীপ ও নোয়াখালীর মূল ভূখন্ডের মধ্যে ফেরি যোগাযোগ রয়েছে । এ এলাকায় মেঘনার মোহনায় প্রচুর সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার ও ছোটছোট জেলে নৌকা এসে ভীড়ে থাকে । এই ফেরীঘাটের সুবাদে এখানে একটি জমজমাট বাজার গড়ে উঠেছে। এখানের অনেক জেলে জানিয়েছেন, তাদের অনেকেরই নিজস্ব কোনো রেডিও নেই। যারা চরের কাছাকাছি থেকে সাধারনত: মাছ ধরে থাকে। ছোট নৌকা নিয়ে তারা কখনো গভীর সমুদ্রে যায় না। কখনো কোনো দুর্যোগ দেখলে নদীর হাবভাব বুঝে সাবধানতা অবলম্বন করে। সারাদিন মাছ ধরা শেষে রাতে তারা চেয়ারম্যান ঘাটে কিংবা হাতিয়া ষ্টিমার ঘাটে আসলে লোকমুখে বিভিন্ন সংবাদ পেয়ে থাকে। নদীর কূলের এ বাজার গুলোতে এখন রেডিও তেমন শুনা হয়না। চা দোকান গুলোতে টেলিভিশন আছে । তাই সেখানে কাষ্টমারের ভীড় লেগে থাকে। যে দোকানে টেলিভিশন নেই সে দোকানে লোকজন তেমন যায় না। এসব দোকান গুলোতে বেশীর ভাগ সময় নাটক ও সিনেমা বেশী দেখা হয়। তবে দুর্যোগকালীন সময় সংবাদ বেশী দেখা হয়। এলাকার মানুষদের বদ্ধমূল ধারনা জন্মেছে যে, রেডিও টেলিভিশনে জাতীয় সংবাদ ছাড়া স্থানীয় সংবাদ প্রচারিত হয়না। তাই তারা খুব প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্থানীয় সংবাদ গুলো লোকমারফত পেয়ে থাকে। তবে তা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয়না। দুর্গম অঞ্চলের অনেক মানুষ জানিয়েছেন গত সিডরের সময় তারা লোকমুখে সংবাদ পেয়েছিলেন। সাগরের অবস্থা দেখে তারা সাগর থেকে ডাঙ্গায় চলে এসেছেন, তবে অনেকে উপরে সাগরের কাছাকাছি নিজেদের ঘরেই ছিলেন। অনেকেই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।
জরিপের বিশ্লেষন: কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content) সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ কার্য চালানোর সময় জানা গেছে, এরকম একটি সম্প্রচার কেন্দ্র সন্মন্ধে অনেকেরই ধারনা খুবই অস্পস্ট। এব্যপারে অনেকের কোনো রকম কোনো ধারনাই নেই। তবে বিষয়টি বুঝার পরে সবার মধ্যেই প্রচুর আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তারা সকলেই মত দেন যে এরকম একটি কেন্দ্র এলাকায় খুবই প্রয়োজন।
নোয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলের কয়েকটি এলাকায় মোট ২০জনের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। এখানে মাত্র দুজনের রেডিও এবং মাত্র এক জনের নিজস্ব একটি ছোট্ট টেলিভিশন ও রেডিও রয়েছে। তাদের অবশ্য খবর তেমন শুনা হয়না। রেডিওতে গান এবং টেলিভিশনে নাটক দেখা ও গানশুনা বেশী হয়। নারিদের শুধু নাটক ও গানই শোনা হয়। তবে পুরুষরা মাঝে মাঝে খবর শুনে থাকে। নারিদের মধ্যে খবর শুনার আগ্রহ খুব কম। গত সিডরের সময় পুরুষরা ১০০ শতাংশই রেডিও কিংবা টেলিভিশনে খবর পেয়েছেন কিন্তু ১০০ শতাংশ নারি বলেছেন তারা তাদের স্বামী কিংবা লোকমারফত খবর পেয়েছেন। ৮০শতাংশ বলেছেন তারা ঝড়ের পূর্বাভাষ পেয়ে নিজেদের জায়গায়ই অবস্থান করেন। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলেন বাড়ির নিরাপত্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। যেমন সেখানে কোথাও পানি বা বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের খুবই অসুবিধা পড়তে হয়। তাই অনেকেই সেখানে যেতে তেমন আগ্রহী হয়না। নিয়তির উপরও তারা অনেকাংশে নির্ভরশীল। ১০০ শতাংশ বলেছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়কালে তাঁরা আবহাওয়ার সংবাদ শুনতে চান। ১০০ শতাংশ বলেছেন তাদের অনুষ্ঠান দেখতে সবচেয়ে বেশী আগ্রহ নাটকের প্রতি । তবে বাংলা সিনেমার প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন, কমিউনিটি রেডিও স্থাপিত হলে শিক্ষার উপর সবচেয়ে বেশী অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেয়া উচিত। অন্য ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন শাসন না করলে শিশুদের পড়াশুনা হয়না। তবে তারা এও জানিয়েছেন এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়। এ বিষয়ে শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠান প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা তারা জানিয়েছেন। ১০০ শতাংশ জানিয়েছেন বয়ো:সন্ধিকালীন সময়ে মেয়েদের সমস্যা বিষয়ক সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান বিশেষ ভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে। সবাই মনে করেন এ ব্যপারে মেয়েরা এমন কি অভিভাবকরাও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নন। এ নিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক দ্বিধা কাজ করে। অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন। এথেকে মেয়েরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিষয়ে ১০০শতাংশ জানিয়েছেন মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, সাধারন রোগবালাই, ডায়রিয়া, খাদ্যে পুষ্টিমান, টিকা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা মুলক অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। তবে মাত্র এক জন এইড্স বিষয়ে অনুষ্ঠান করার কথা জানিয়েছেন। বাসস্থান বিষয়ে ৭৫শতাংশ জানিয়েছেন, ভূমি ও ভূমির অধিকার বিষয়ে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। অবশ্য এ ব্যপারে পুরুষরাই বেশী আগ্রহী। নোয়াখালীতে তাঁত শিল্পের তেমন কোনো প্রসার নেই। এবিষয়ে কারো তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে ১০০শতাংশই হস্তশিল্প ও নারিদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করার কথা বলেছেন। একজন মন্তব্য করেন এক সময় নোয়াখালীতে প্রচুর তাঁতের প্রসার ছিলো । কিন্তু কালের গর্ভে তা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানে স্থানে যুগীপাড়া ছিলো। সেখানে লুঙ্গি গামছা শাড়ি এসব স্থানীয় ভাবে তৈরী হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও এগুলো বাইরের জেলা গুলোতে চালান হতো। কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে পারলে সেগুলো হয়তো আবার চালু হবে। আশা করা যায় এ থেকে তখন হয়তো এ এলাকার অনেক উন্নতি সাধিত হবে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন কৃষিঋণ, সার, বীজ, উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ, হাঁস মুরগি পালন, কীটনাশক ছাড়া সব্জী চাষ, খাদ্যে পুষ্টিমান ইত্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যম হওয়া উচিত নাটক, কথিকা, জীবন্তিকা ইত্যাদির মাধ্যমে। এরা আরো জানিয়েছেন স্থানীয় ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে সবার কাছে তা গ্রহনযোগ্য হবে। এছাড়াও স্থানীয় ভাষায় নাটক, গান এবং স্থানীয় সমস্যা ও সমাধান ইত্যাদি বেশী বেশী প্রচার হওয়া দরকার বলে সবাই জানিয়েছেন।
উপসংহার:- সার্বিক জরিপে দেখা যায় এ এলাকার জন্য কমিউনিটি রেডিওর অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দুর্গম এ অঞ্চলের মানুষ কাছের খবরটিও সঠিক ভাবে পায়না। কথায় কথায এলাকাবাসী জানায়, ‘ইরােক েবামায় মানুষ মরার খবর আমরা সাথে সাথে রেডিও টেলিভিশনে পাই কিন্তু পাশের গ্রামে মড়ক লেগে হাঁসমুরগী মারা গেলে আমরা তার খবর পাইনা অথচ এটি আমাদের জন্য অধিকতর জরুরী’। এখানে এটি স্থাপিত হলে শুধু দুর্যোগকালীন সময়েই নয়, এ কেন্দ্র গ্রামীণ জনগণের সার্বক্ষনিক দিনযাপনের অনুসঙ্গ হয়ে থাকেব। স্থানীয় ভাষায় স্থানীয় আঙ্গিকে স্থানীয় সমস্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে এটি জনগনের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করবে এবং অধিক গ্রহনযোগ্যতা পাবে। এলাকায় সচেতনতা বাড়বে। উপকৃত হবে প্রান্তিক মানুষ।
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
মোবাইল: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@gmail.com
Mail to : massline@bangla.net
masslinemediacenter@yahoo.com
|
|
|
|
|
|
|
|