রৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টি রৌদ্রবৃষ্টি রৌদ্রবৃষ্টি রোদ্রবৃষ্টি
   
 
  চাটাই২


     
   
নোয়াখালীর চাটাই শিল্পের  সাথে জড়িত দরিদ্র নারীদের
আর্থ-সামাজিক ও জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের পন্থা উদ্ভাবন

গবেষণার উপস্থাপনা

নোয়াখালীর চাটাই শিল্পের সাথে জড়িতদরিদ্র নারীদের 
আর্থ-সামাজিক ও জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের পন্থা উদ্ভাবন

-গবেষক-

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ 




গবেষণা টিমে যাঁরা রয়েছেন :

১. মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ   প্রধান গবেষক
২. নিলুফার আক্তার    গবেষণা সহযোগী
৩. শাহানা আক্তার শাহিন   এনিমেটর
৪. খালেদা আক্তার লাবনী   এনিমেটর
৫. মারজাহান সুলতানা মার্জু   এনিমেটর
৬. আনোয়ারা বেগম আর্জু   এনিমেটর
৭. নাসির উদ্দিন শাহ্ নয়ন   এনিমেটর


                                                          
 গবেষণার মেয়াদকাল          
৬ (ছয়) মাস
                                            
১ জুলাই, ২০০৪ইং থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৪ইং

পদ্ধতি : অংশগ্রণমূলক কর্ম গবেষণা

সহায়তা :  রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস্, বাংলাদেশ (রিইব)

 

গবেষণার সার সংক্ষেপ

নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু এলাকার নারীরা চাটাই শিল্পের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রয়েছেবিশেষ করে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের সুধারাম থানার সাহেবের হাট, চর মটুয়া, খলিফার হাট, এওজবালিয়া, ইসলামগঞ্জসহ এক ব্যাপক এলাকায় এগুলো তৈরী হয়নিম্ন আয়ের দরিদ্র প্রতিটি ঘরে ঘরেই নারীরা এই শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িতউপকূলীয় পলিমাটি সমৃদ্ধ এই এলাকায় চাটাই পাতা প্রচুর উপন্ন হয়কোন রকম চাষাবাদ ছাড়াই নীচু জমিতে এই পাতার গাছ আপনাতেই জন্মেস্থানীয় ভাষায় এটি হোগলা নামেই পরিচিতহোগলা পাতা দিয়ে সাধারণতঃ চাটাই বা বিছানা তৈরী হয়এই চাটাই নিম্ন আয়ের জনগণ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বিছানা হিসেবে ব্যবহার করেতাছাড়া ঘরের ছাউনী, বেড়া ও ফসল রাখার টুকরী বানানোর জন্যও এই পাতা ব্যবহার করা হয়এটি একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ শিল্পও বটেহোগলা পাতা দিয়ে চাটাই তৈরীর কাজ প্রধানতঃ নারীরাই করে থাকেনোয়াখালীর এই অঞ্চল থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার চাটাই তৈরী হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানী হয়সিলেট, ব্রাক্ষ্মনবাড়ীয়া, রংপুর, ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের উত্তরাংশে বছরে কয়েক কোটি টাকার চাটাই চালান হয়সে সব অঞ্চলে এর ব্যাপক বাজার রয়েছে আনুমানিক চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার নারী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে প্রতিদিন নিরলস ভাবে চাটাই তৈরী করে থাকেকিন্তু মধ্যস্বত্ব ভোগী দালাল, ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা নারীদের এই অক্লান্ত শ্রমকে জিম্মি করে রেখেছেতাদের শ্রমের কোন মূল্য দেয়া হয় নানানান কৌশলে নাম মাত্র মূল্যে ফড়িয়ারা নারীদের কাছ থেকে চাটাই কিনে নেয়ফলে উপাদনকারী বিপুল সংখ্যক নারীরা তাদের শ্রম মূল্য না পেয়ে অনেকেই মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেএই নারীদের অধিকাংশই সম্পূর্ণ নিররএর ফলে একদিকে যেমন এই সম্ভাবনাময় শিল্পটি দিন দিন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে অন্যদিকে এই নারীদেরও জীবনের কোনো পরিবর্তন হয়নি

চাটাই সাধারণতঃ নিম্ন আয়ের মানুষ বেশী ব্যবহার করেদামেও এটি অপেক্ষাকৃত কমতাই একে গরিবের বিছানা নামে অনেকেই অবহিত করেনবিভিন্ন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এ শিল্পটির বিপুল সম্ভাবনার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এর কোনে প্রসার ঘটেনি

এই পরিপ্রেক্ষিতে চাটাই শিল্পের সঙ্গে জড়িত জনগোষ্ঠীর উপর ব্যাপক গবেষণার লক্ষে রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস্ বাংলাদেশ (রিইব) এর সহযোগিতায় নোয়াখালী সুধারাম উপজেলার কয়টি প্রত্যন্ত গ্রামে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়কি করে এই নারীদের আরো বেশী সহযোগিতা করা যায় এবং মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্র থেকে উদ্ধার করে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো যায় সে উদ্দেশ্যেই মূলত এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে

নোয়াখালীর এ গ্রামগুলো হোগলা শিল্পের কেন্দ্রবিন্দুএখানে পর্যায়ক্রমে এ শিল্পটি বিকাশ লাভ করেছেএক সময় মেঘনার মোহনায় এই এলাকা গুলো ভেঙ্গে গেলে পলিমাটি সমৃদ্ধ পয়স্তি নীচু জমিতে হোগলা গাছ উপন্ন হয়েছেসাধারনতঃ নতুন জেগে উঠা জমিতে প্রকৃতিকভাবেই এ গাছ বংশ বিস্তার করেএলাকার মানুষ প্রায় বিনা শ্রমেই এগুলো পেয়ে থাকেযার কারণে ঐ এলাকায় হোগলা পাতা দিয়ে তৈরী চাটাই শিল্প প্রসার লাভ করেছেএ পেশায় সাধারনতঃ ঐ এলাকার নারীরাই জড়িতএ শিল্পটি নারী শ্রমিকদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীলএ এলাকায় এমন কোন বাড়ী পাওয়া যাবেনা যেখানে নারীরা একাজে নেইএই নারীরা অসম্ভব পরিশ্রমী ও নিবেদিত প্রাণশ্রমজীবি গ্রামীণ এ নারীরা অবদান রাখছে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পেএটি একটি চলমান শিল্প এবং ক্ষয়িষ্ণুও নয়কিন্তু এর পেছনের সুদক্ষ কারিগর নারীরা রয়ে গেছে বঞ্চিত শোষিত ও ঋণগ্রস্থু হয়েদিনরাত অমানুষিক পরিশ্রম করেও এরা এদের অভাব ঘুচাতে পারেনি

ছয় মাস ব্যাপী এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে সম্পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণা  পদ্ধতিতেকর্ম এলাকায় পাঁচটি গ্রুপ করে পাঁচ জন এনিমেটর গবেষণার কাজ পরিচালনা করেছেনএ গবেষণায় মূলত: গবেষক ছিলেন চাটাই শিল্পের নারীরা   ১ জুলাই ২০০৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৪ পর্যন্ত ৬ মাস ব্যাপী ছিলো এর সময়কালগবেষণা করতে গিয়ে প্রথমে এনিমেটর টিমকে এক কঠিন বাস্তবতার মধ্যে পড়তে হয়েছিলোগ্রামের নারীরা প্রথমে দাবি করে বসেছিলো তাদেরকে রিলিফ বা অনুদান দিতে হবেঅন্তত: প্রতিশ্রুতি দেওয়া জন্য তারা পিড়াপিড়ি করেকিন্তু এ গবেষণাটি ছিলো গতানুগতিক গবেষণার বাইরে একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকেরকোনো রকম প্রতিশ্রুতিতে গবেষণা টিমটি ছিলো একেবারেই অপরাগদুটি যায়গা থেকে এদের চলেও আসতে হয়েছেপরে যখন গবেষণা  শুরু হলো তখন এই নারীরা বুঝতে পারলেন দান খয়রাত অনুদান কি ভাবে এদেরকে অবদমিত করে রেখেছেতাঁরা বুঝতে পারলেন তাঁদের ভিতরে রয়েছে এক অসাধারণ ক্ষমতাএর সঠিক ব্যবহারেই তাদের অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভবএর জন্য প্রয়োজন একটু সহায়ক পরিবেশশত শত বছর ধরে নারীদের মধ্যে যে কুসংস্কার  পাথর চাপা দিয়ে অচলায়তন সৃষ্টি করে রেখেছে তা সামান্য এ কয় দিনের গবেষণায় সরানো সম্ভব নয়তবে এ গবেষণার ফলে তাদের চিন্তা চেতনায় আশাপ্রদ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে
 
 
এ গবেষণাটি পরিচালনা করার জন্য মূল গবেষক, একজন সহযোগী গবেষক ও পাঁচ জন মাঠ পর্যাযের এনিমেটর বা উজ্জীবক নিয়ে সাত জনের একটি দল গঠন করা হয়েছিলোএর জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চলের পাঁচটি স্পট ঠিক করা হয়সে নির্দিষ্ট এলাকার নারীদের নিয়েই এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছেপ্রতি সপ্তাহে নিয়মিত ভাবে গবেষক নারীরা দলীয় অলোচনা ও গবেষণায় অংশগ্রহন করেএরপর মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার আলোকে গষেণার পুরো টিমকে নিয়ে নিয়মিত সাপ্তাহিক কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছেএ কর্মশালার মাধ্যমে গবেষণার অগ্রগতি পর্যালোচনা ও পরবর্তী সপ্তাহের কার্যক্রমের পরিকল্পনা করা হয়েছ প্রতি সপ্তাহে এনিমেটররা প্রত্যেকে একটি করে রিপোর্ট করেছেন এবং সব শেষে রিপোর্ট গুলো সমন্বয় করে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছেগবেষণাকালে এলাকার বিভিন্ন মানুষের সাক্ষাকার গ্রহণ করা হয়এ ছাড়াও শতাধিক ষ্টিল ছবিও  তোলা হয়েছে



               
         
নোয়াখালীর চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত দরিদ্র নারীদের
         
আর্থ-সামাজিক ও জীবন যাত্রার মানোন্নয়নের পন্থা উদ্ভাবন

 

গবেষণার উপস্থাপনা

গবেষণার ধারণা :

নোয়াখালী জেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের প্রায় লক্ষাধিক দরিদ্র নারীরা চাটাই শিল্পের সাথে প্রত্যভাবে জড়িত রয়েছেযুগ যুগ ধরে এ শিল্পের সাথে জড়িত থেকেও তারা তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারেনিঅনেক নারী ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেঋণ এবং অনুদান সর্বদা এদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে এই দরিদ্র নারীদের আর্থ-সামাজিক জীবন ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে আছেদিন ও রাত তাদের জীবন একই চক্রের মধ্যে ঘূর্ণিয়মান হচ্ছেএ নারীরা অসম্ভব পরিশ্রমী ও নিবেদিত প্রাণশ্রমজীবী এ গ্রামীণ নারীরা অবদান রাখছেন দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পেঅথচ এ শিল্পটি ক্ষয়িষ্ণুও নয়এর পিছনের কারিগর নারীরা রয়ে গেছে বঞ্চিত শোষিত ঋণগ্রস্থ হয়েতাদের জীবনে কোন বিনোদন নেই, খুব স্বপ্নচারীও তারা নয়শুধু আকুতি রয়েছে একটু বেঁচে থাকার এদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারী বেসরকারী কোন পর্যায়ে থেকেই এ যাবত কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নিচিন্তা চেতনার দিক দিয়েও এরা এক বৈচিত্র্যহীন জীবনের ঘানি টেনে যাচ্ছেঅথচ এ নারীদের মধ্যেই  নিহিত রয়েছে অসাধারণ এক সম্ভাবনার পথ




চাটাই পাতা বা হোগলা পাতা

যে গাছের পাতা দিয়ে চাটাই তৈরী করা হয়, স্থানীয় ভাষায় একে হোগলা পাতা বলা হয়এটি তৃণ জাতীয় উদ্ভিদউপকূলীয় পলিমাটিতে এ গাছটি আপনাতেই জন্মেএ গাছটি লম্বায় ১২ থেকে ১৫ ফুট হয়ে থাকেনোয়াখালীতে প্রায় ৩২৫ হেক্টর জমিতে হোগলা পাতার চাষ হয়প্রায় এক ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ত্রিকোণাকৃতি মাংসল পাতা এর প্রধান বৈশিষ্ট্যএ পাতা দিয়ে চাটাই বা বিছানা তৈরী করলে বিছানাটি নরম ও আরামপ্রদ হয়নিম্নবিত্ত ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এটি ব্যবহার করেতাছাড়াও দড়ি, ঘর তৈরী, বেড়া, তাজা ফল মূল বা কোন কিছু পরিবহনের জন্য টুকরী বানিয়ে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়এটি ১০০% পরিবেশ সম্মতভেজা  স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে সারা বছরই এটি জন্মেগবেষণা প্রকল্প এলাকার প্রতিটি গ্রামেই হোগলা পাতার বন পরিদৃষ্ট হয়


বাজার ব্যবস্থাপনা :

হোগলা পাতা দিয়ে উপাদিত পণ্য বিশেষ করে আভ্যন্তরীণ বাজারেই সরবরাহ করা হয়নোয়াখালীর কয়টি গ্রামীণ বাজার এ পণ্যের জন্য বিখ্যাতপ্রতি সপ্তাহে লক্ষ লক্ষ টাকার পণ্য এখানে বেচা কেনা হয়এখান থেকে ব্যবসায়ীরা সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেবিদেশের বাজারে হোগলা পাতা দিয়ে তৈরী উচ্চমানের হস্তশিল্প তৈরী করে দুএকটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানী করছেবিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এর প্রসার এখনো তেমন ঘটেনিস্থানীয়ভাবে ফড়িয়ারা এর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেগ্রামীণ নারীদের কাছ থেকে খুবই অল্প দামে কিনে এরা অধিক মুনাফায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেএর জন্য গড়ে উঠেছে একটি ফড়িয়া চক্রচাটাই শিল্পের নারীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এ চক্রটি মুনাফা লুফে নিচ্ছে



অমিত সম্ভাবনা

হোগলা পাতার এ শিল্পটির রয়েছে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাএ থেকে পরিবেশ সম্মত পণ্য উপাদন হয় বিধায় এর ব্যাপক চাহিদাও রয়েছেতবে প্রচারের অভাবে এটি তেমন বিকাশ লাভ করেনিছোট বিছানা, নামাজের মাদুর, কুশন, ঝুড়ি, টুপি, ছোট ব্যাগ, টুকরী, ঘরের নানান ধরণের ওয়ালম্যাট, এল্টিক্স, হাত পাখা ইত্যাদি নানান পণ্য এ থেকে উপাদিত হতে পারে বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছেনানান গবেষণার মাধ্যমে এর বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার খুঁজে বের করে একে আরো জনপ্রিয় করে গড়ে তোলা সম্ভবএছাড়া মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের কাছ থেকে এর বাজারকে উদ্ধার করে গ্রামীণ নারীদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে এ শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা প্রত্যক্ষ উপকৃত হবে

 

গবেষণার লক্ষ্য :

# চাটাই শিল্পে জড়িত নারীদের জীবন চিত্র তুলে ধরা
# এদের শ্রমের ধরণ ও জীবিকার সংকটের কারণ অনুসন্ধান করা
# প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংকটের কারণ ও তার সমাধানের পন্থার আলোকে পুনরায় গবেষণা করা যায়        কিনা সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান করা

 

সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য :

চাটাই শিল্পে জড়িত নারীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের দুর্ভোগ নিরসনের পন্থা উদ্ভাব

গবেষণার স্থান :

নোয়াখালী জেলার সদর থানার দক্ষিণাঞ্চলের এওজবালিয়া, কালাদরাপ, চরমটুয়া ইউনিয়নের কয়টি গ্রামে এ গবেষণার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছেনোয়াখালী শহর থেকে এ স্থানগুলো ১৫ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে  অবস্থিতএ সব স্থানগুলো ঘন বসতিপূর্ণ নীবিড় নিভৃত গ্রামশহর থেকে এ গ্রামগুলোতে যোগাযোগের ব্যবস্থা মোটামুটি ভালযাতায়াতের জন্য রিক্সা, টেম্পু, টেক্সি ইত্যাদি রয়েছেএলাকাটি মূলতঃ কৃষি প্রধানএ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীলধান এখানকার প্রধান কৃষি পণ্যমৌসুমে এখানে প্রচুর শাক সব্জী পন্ন হয়গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে হোগলা পাতার বন


 সরণি-১: গবেষণা সম্পর্কে অংশগ্রহণকারী নারীদের ধারণা :

আমরা কয়েকজন মিলে কথা বলছি, এটাই হলো গবেষণা
২ কয়েক জন মিলে যুক্তি করে কিছু করাই গবেষণা
৩ নতুন কিছু তৈরী করা
৪ অজানা বিষয়কে জানা
৫ যেমন আমরা চাটাই বানাই, কাটি, বাছাই করি, তারপর বানাই, বিক্রি করিআবার   আপনি এটা নিয়ে কথা   বলেন, এটাই হলো গবেষণা


যেভাবে গবেষণা পরিচালিত হয়েছে :

এই গবেষণাটি সম্পূর্ণ অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণার পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়েছেএটি  অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণাএ গবেষণা পদ্ধতিটিতে কোনো ভাবেই গতানুগতিক অন্যান্য গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নিএ গবেষণাটি পরিচালনার জন্য মূল গবেষক, একজন সহযোগী গবেষক ও পাঁচ জন মাঠ পর্যায়ের এনিমেটর বা উজ্জীবক নিয়ে সাত জনের একটি দল গঠন করা হয়েছেএর জন্য নোয়াখালীর সদর উপজেলার নির্দিষ্ট অঞ্চলের পাঁচটি স্পট ঠিক কর হয়েছেসে নির্দিষ্ট এলাকার নারীদেরনিয়েই এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছেএগুলো হলো :

১. জুম্মারাগো বাড়ী,
    
কালাদরাপ ইউনিয়ন,
    
রাহামুড়ী তালুক গ্রাম
২. দপ্তরী বাড়ী,
    
পূর্ব এওজবালিয়া ইউনিয়ন,
    
সাহেবের হাট
৩. রুহুল আমিনের বাড়ী,
   
বরাইপুর গ্রাম ,
   
কালাদরাপ ইউনিয়ন
৪. আবুল খায়ের মিয়ার বাড়ী,
    
পূর্ব এওজবালিয়া,
   
শান্তিনগর গ্রাম
৫. আকরাম খাঁ মেম্বার বাড়ী,
    
এওজবালিয়া গ্রাম

এই পাঁচটি স্পটে নারীদের নিয়ে গবেষক দল গঠন করা হয়েছেপ্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে গবেষক নারীরা দলীয় আলোচনা ও গবেষণায় অংশগ্রহণ করেগবেষণার উজ্জীবকরা প্রতিটি দলে সমন্বয়কের কাজ করেছেন মাত্রএক একটি স্পটের এক একটি দলে একজন উজ্জীবক দায়িত্ব পালন করেছেনগবেষকরা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের বিষয় সমস্যা আলোচনা করেছেনএক একদিন এক এক বিষয় নিয়ে তারা গবেষণা করেছেন সেই গবেষণার বিষয়গুলো উজ্জীবকরা গভীর পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং এর ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরী করা হয়েছেপ্রতি সপ্তাহে মাঠের অভিজ্ঞতার আলোকে গবেষণার পুরো টিম নিয়ে সপ্তাহে একদিনের কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছেএ কর্মশালাগুলোতে সকলে মাঠের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং এ থেকে পরবর্তী সপ্তাহের জন্য কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়মাঠ পর্যায়ের ভুলত্রু টি সুবিধা অসুবিধা গুলো আলোচনা করে এর মাধ্যমে একটি নতুন দিক নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া গেছেএর ভিত্তিতে সকলেই সাপ্তাহিক রিপোর্ট ও মাস শেষে মাসিক রিপোর্ট / প্রতিবেদন তৈরী করেছেনএ থেকে গবেষণার একটি সুশৃঙ্খল ডকুমেন্টশন করা হয়েছেগবেষণা চলাকালীন বিভিন্ন ফটোগ্রাফ নেয়া হয়েছেএ পদ্ধতিতে গবেষণা করার ফলে এমন কতগুলো বিষয় উঠে এসেছে যা আগে ধারণা করা হয়নিপ্রথম প্রথম মাঠ পর্যায়ে গবেষণা দল গঠন করতে গিয়ে গ্রামের অনেকেই জানতে চেয়েছেন ঋণ কিংবা রিলিফ দেওয়া হবে কিনা গবেষণা টিমের প থেকে এর ফলে একটি কঠিন বাস্তবতার মধ্যেই পড়তে হয়েছিলোঋণ ও রিলিফ / অনুদান ছাড়া অনেকে কথা বলতেই নারাজ ছিলোদুই জায়গা থেকে গবেষণা টিমকে ফিরেও আসতে হয়েছেপরে যখন গবেষণা শুরু হলো তখন গ্রামীণ এই নারীরা আশ্চর্যরকম ভাবে পরিবর্তিত হয়ে উঠলোঅনেকেই নিজেদেরকে খুঁজে পেতে লাগলোএরা এখন খুবই আগ্রহী ও উসুকতারা ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছে রিলিফ অনুদান দিয়ে নয়, নিজের ভিতরের মতা ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব


 

গবেষণা যেভাবে সমন্বয় করা হয়েছে :

প্রধান গবেষক পুরো গবেষণার সমন্বয় ও পরিচালনা করেছেনগবেষণার সকল বিষয় পরিচালনার জন্য তিনি একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেনপাঁচ জন এনিমেটরের প্রতি সপ্তাহের মাঠের জরিপ ও গবেষণা নিয়ে সকলের রিপোর্ট জমা হলে গবেষক ও সহযোগী গবেষক এ নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন গবেষণার ধারাবাহিকতা রার জন্য সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়প্রতি সপ্তাহের কর্মশালায় প্রধান গবেষক কর্মশালার পরিচালনা করেন এবং প্রধান সমন্বয়ক হিসাবে কাজ করেনএনিমেটররা যেহেতু অধিকাংশই নারী সংবাদকর্মী সুতরাং গ্রামের নারীদের সাথে এরা সহজে মিশে দ্রুত কাজ করতে পেরেছেনমাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রাথমিক সাফল্য পাওয়া গেছেগ্রামীণ নারীরাও খুব সহজে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এদের সাথে মিশে গেছেননারীরা তাদের কষ্ট বেদনার কথা উজাড় করে বলতে পেরেছেন অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণার জন্য যা অত্যন্ত জরুরীগবেষক এনিমেরদের জন্য এটি স্পর্শকাতর হৃদয়ঘন উষ্ণ অভিজ্ঞতাপ্রাথমিকভাবে গবেষণায় নারীদের সম্বন্ধে যে বিষয়গুলো জানা গেছে তা হলো-

 

তারা যে চিন্তাগুলো ধারণ করে আছে

নারীরা খুবই সীমিত গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ
 
পুরুষরাইv শ্রেষ্ঠ নারীদের উপর কর্তৃত্ব করার অধিকার রয়েছে পুরুষদের
 
নারীদের সৃষ্টিv হয়েছে পুরুষদের সেবা দাসী হিসাবে
 
পুরুষের বাম পাঁজড় থেকে নারীর সৃষ্টি
v রান্না বান্না ঘর সংসারের কাজ করবে নারীরা
 
পুরুষ এবং নারী উভয়ে ভিন্ন ভিন্নv জাত
 
পুরুষের পায়ের নীচে নারীর বেহেস্তস্বামীর পায়ের নীচে স্ত্রীর বেহেস্ত

অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষণ :

এলাকার ৮০% নারীরা চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত
 
চাটাই বিক্রির টাকা এরা স্বামীদের হাতে তুলে দেয়
 
৫% পরিবার খুবই নিম্ন আয়ের
 পাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পায় না
 
৬০% নারী কোন না কোন ভাবে ঋণগ্রস্থ
সিলেট, রংপুর, চট্টগ্রাম ইত্যাদি অঞ্চলে চাটাইয়ের প্রচুর চাহিদ রয়েছে
সামাজিক পরিবেশ, স্বাস্থ্য :

৯৮% পরিবার খোলা পায়খানা ব্যবহার করে
 
১০০% পরিবার পুকুর ব্যবহার করে
 
কবিরাজ, হাতুড়ে ডাক্তার, গ্রাম ডাক্তার, তাবিজ তুমার ইত্যাদির উপর ভরসা করে
 
নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা নেইশিক্ষার হার খুবই কম

চাটাই তৈরী :

চাটাই তৈরীতে নারীরা বিভিন্ন সময় নির্ধারণ করে থাকে
 
রাত্রীতে চাঁদের আলোতে চাটাই তৈরী হয়
 
ভোরের কুয়াশা, েজা আবহাওয়ায়, ছায়াযুক্ত মাটিতে নারীরা চাটাই তৈরী করে
 
বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে চাটাই তৈরীর হাতেখড়ি হয়
 
চাটাই ছাড়া অন্য কোন পণ্য তৈরী করেনা
 
ফড়িয়ারা চাটাইয়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে
 
কুটির শিল্পের কোন প্রশিণ এরা পায়নি
 
প্রশিক্ষণ পেলে অনেক নতুন বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরী করা সম্ভব, যা দেশে ও বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে

 

 


সুখ যন্ত্রণার অনুকাব্য :

বৈচিত্র্যহীন জীবনের ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যে বসবাস করলেও প্রাণের স্বপ্নিল কষ্ট যন্ত্রণাগুলো কাজের ছন্দে ছন্দে মাঝে মাঝে ধরা দেয়শিক্ষাদীক্ষাহীন গ্রাম্য নারীদের কন্ঠ থেকে আপনাত উচ্চারিত হয় ওদের জীবনের নানান অনুসঙ্গ

বিছানা বা চাটাই নিয়ে প্রসঙ্গ কাব্য

বিছানা দিলাম যেমন তেমন
 
বালিশ দিমু না
 
দমকার বিছানা
 
বিছাই দিলে বেজার হইও না
 
নানান প্রতিকূলতার মাঝেও চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা নিত্য স্মরণ করে তার সৃষ্টিকর্তাকেসকল আপদে বিপদে সৃষ্টিকর্তাই একমাত্র ভরসা
 
মাছে করে পানির আশা
 
পঙ্খী করে ডালের আশা
 
আমি করি কিসের আশা?
 
আমি করি মাওলার আশা

সোহাগ ভালবাসা রাগ অনুরাগে নিজের পছন্দের মানুষকে আগলে রাখেতার জন্য সব কিছু উজাড় করে দেয়
 
যার লাই যার হরান কান্দে
 
উদার করি ভাত রান্দে

ঋণ গ্রহণ করতে নারীদের পড়তে হয় নানান বিড়ম্বনার মধ্যেএছাড়াও অযাচিত ঋণের কুফল সম্পর্কেও ওদের অজানা নয়দুর্ভোগের কথা কাব্যের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়-

হাঁইটতে হাঁইটতে নালা
 
খাইতে খাইতে গলা

বর্ষাকালে মাটি জায়গা মত থাকেনাধুয়ে চলে যায়মানুষের আশাগুলোও বিলীন হয়ে যায়

আল্লা নেয় তোড়ে
 
বান্দার আশা গড়ে (নালা নর্দমা)


প্রয়োজনের সময় সকল অনুভূতি বিসর্জন দিতে হয় তাদের

গিন (ঘৃণা) হালাইছি গড়ে (নালা নর্দমা)
 
ভাত হালাইছি নড়ে (নাড়ীতে)


প্রিয় মানুষ প্রিয় মুখ যখন দূরে চলে যায়চলে যায় মনের আড়ালেহঠাত্ করে যখন এসে কখনো দেখা দেয়, অভিযোগের সুরে বলেন-

দিন গেল কাল গেলো
 
উক্কু (হঠা) করি মনে পড়লো



গবেষণার গতিময়তা :

গবেষণার ছক বাঁধা হয়েছিলো মাত্র ৬ মাসের জন্যকাজ করতে গিয়ে কিছু বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, যে এটি ঠিক গতানুগতিক গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে নাএকটি সুদূর প্রসারী কর্মসূচীতে এটিকে সংযোজন করতে হবেগবেষণার একদিকে যেমন রয়েছে চাটাই শিল্পে দরিদ্র নারীদের সামাজিক পরিবর্তনের ভাবনা তেমনি এই সম্ভাবনাময় উপেতি একটি গ্রামীণ শিল্পের প্রসারের রয়েছে অমিত সম্ভাবনাযার অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে অসীমতাই এ বিষয়ে গবেষণা টিমটিও গভীর আগ্রহে ও উত্সুক্য নিয়ে নিরলস কাজ করে গেছেমানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এবং দেশাত্ববোধ এর প্রধান অবলম্বন



যেসব নারীরা চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত :

গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্নবিত্ত পরিবারের একদল তৃণমূল নারী মূলতঃ এ চাটাই শিল্পের ধারক ও বাহকদৈনন্দিন জীবনের বেঁচে যাওয়া সময়টুকুকে তারা ব্যয় করেন চাটাই বুননের কাজেচাটাই তৈরীর কাজ তাদের জন্য খুব একটা কঠিন না হলেও বেশ পরিশ্রমের ও সময় সাপে এ সব নারীরা ঘর সংসার সামলানোর পরেও পরিবারের বাড়তি কিছু রোজগারের প্রত্যাশায় হোগলা পাতার নান্দনিক রূপ দিয়ে তৈরী করেন চাটাই শিল্পএখানকার নারীরা তাদে পূর্ব পুরুষ থেকে প্রাপ্ত পেশাটিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যাচ্ছেনকোনো রকম প্রশিণ ছাড়াই তারা কাজগুলো শিখেছেন বংশ পরম্পরায়


চাটাই শিল্পীদের আর্থসামাজিক অবস্থা :

চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিতঅনেকের নূন আনতে পান্তা ফুরায়একটি মানুষের বেঁচে থাকার যে পাঁচটি মৌলিক অধিকার রয়েছে তা আদৌ এদের জীবনে অর্জিত হচ্ছে কি কিনা এ নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথাও নেইএদের বেশীর ভাগই অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিতবঞ্চিত স্বাস্থ্য সেবা থেকেনানা রকম কুসংস্কার ও নিজস্ব ধ্যান-ধারণাকে মনের মাঝে পোষণ করে আছেন এরাগবেষণার মাধ্যমে তারা তাদের নানান সমস্যাগুলো নিজেরাই চিহ্নিত করতে পেরেছেনএ সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণকল্পে বিভিন্ন পর্যায়ে মতবিণিময় কালে তাদের মেধা ও মননশীলতার পরিচ্ছন্ন একটি দিক প্রকাশ পায়বোঝা যায় উপযুক্ত শিক্ষা পেলে এরা নিজেদেরকে নুতন ভাবে আবিষ্কার করার সুযোগ পাবেন

শিক্ষা ব্যবস্থা :

এক সময় নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে এরা রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করলেও বর্তমান যুগের বিবর্তনের এ কালকে তারা অস্বীকার করছে নাকিন্তু দারিদ্র .এদের শিক্ষার সু-কোমল বৃত্তিকে দাবিয়ে রেখেছেতবে এ বিষয়ে তাদের ইচ্ছা শক্তিরও বিকাশ ঘটেনিআবার কেউ কেউ অভাবের দোহাইকে প্রশ্রয় না দিয়ে  তাদের ছেলে মেয়েদেরকে ক্রমশ: স্কুলগামী করে তুলেছেতারা বুঝতে শিখেছে শুধু অর্থ নয় ভাগ্য উন্নয়নের জন্য শিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে

চিকিত্ / স্বাস্থ্য সেবা :

এলাকার নারীদের অনেকেরই পুষ্টিহীনতায় ভরা জীর্ণশীর্ণ দেহঅনেকেই ভুগছেন নানা রোগ শোকেএর কারণ হিসাবে তারা তাদের নিত্য দিনের অভাব অনটনকে দায়ী করেছেনদারিদ্র তাদেরকে যেমনি আবদ্ধ করে রেখেছে তেমনি আবদ্ধ করেছে রোগ বালাইএখানকার এ জনগোষ্ঠীর জন্য এখানে নেই কোন চিকিত্সা কেন্দ্ররোগ বালাই হলে তাদেরকে হতে হয় শহরমূখীকিন্তু স্বল্প আয়ের এ মানুষগুলোর পে শহরে এসে ব্যয় বহুল চিকিত্সা গ্রহণ করা কোন রকম সম্ভব নয়এ অবস্থায় তারা শরণাপন্ন হয় সনাতনী চিকিত্সা ব্যবস্থারঅর্থা বাধ্য হয়ে তাদেরকে নির্ভর করতে হয় ঝাড় ফুঁক সহ নানা রকম কবিরাজি চিকিত্সায়এ প্রসঙ্গে আলোচনা কালে এখানকার বয়স্ক জনেরা মনে করেন তাদের সময় চিকিত্সা ব্যবস্থা না থাকলেও এখনকার প্রজন্মের জন্য এখানে চিকিত্সা কেন্দ্র গড়ে উঠা খুবই জরুরীবিয়ের পর থেকে সোমেনা খাতুন (৬০) চাটাই তৈরী করে আসছেন, বলেন, ‘‘বাবারে আঙ্গো দিন তো হারই গেছে অনগার হোলাহাইনের লাইতো এক্কান ডাক্তারখানা দরকার’’ এখানকার চিকিত্সা ব্যবস্থা নিয়ে স্থানীয় প্রতিনিধি সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, এখানকার স্থানীয় কয়েকটি সমস্যার মধ্যে চিকিত্সা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা প্রধান একটি সমস্যা এতগুলো জনগোষ্ঠীর জন্য এখানে সরকারী বেসরকারীভাবে আজো গড়ে উঠেনি কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্র


সরণি ৩: চাটাই শিল্পের নারীদের নিজেদের সম্পর্কে ধারণা


 
আমরা সবাই চাটাই বানাতে পারি
 
বাচ্চা লালন পালন, নামায কালাম পড়া
 
গান গাওয়া, বিয়ের গান গাওয়া ইত্যাদিতে অভিজ্ঞ
 
সেলাই করতে পারি
 
নাচতে জানি
 
কুটির শিল্পের কাজ জানি

বিনোদন :
 
একজন মানুষের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে বিনোদন ব্যবস্থা একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেবর্তমান মিডিয়ার যুগে বিনোদনের নানা ব্যবস্থা থাকলেও এর কোনটিই এই সব তৃণমূল মানুষের দ্বারপ্রান্তে  এসে পৌঁছেনিগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথাও কোথাও দুএকটি টেলিভিশন থাকলেও এটি পর্যাপ্ত নয়কারণ রক্ষণশীল সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থায় নারীদের পক্ষে লোকালয়ে গিয়ে বিনোদন উপভোগ করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নিতাই তারা নিজেদের মধ্যে গল্প-গুজব, হাসি-ঠাট্টা করে সময় কাটানতবে এই কথা সত্য যে, গ্রামীণ এমন কিছু সংস্কৃতি আছে যা অনেক পুরনো হলেও তা এদের আনন্দ দিয়ে থাকেযেমন রেডিওর গান, ক্যাসেটের গান, বিয়ের গান, জারী গান, শ্লোক, পুঁথি ইত্যাদি

সরণি-৪: পুরুষদের সম্পর্কে নারীদের ধারণা :


 
# পুরুষ উপার্জন করে
 
#বাজার করে
 
#ক্তি বেশি
 #সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে
 # সংসারের ভালোমন্দ দেখে
 #সন্তান জন্মদানেv সহায়ক ভূমিকা পালন করে, বাবা হয়

 

হোগলা পাতার চাষ পদ্ধতি :

অঞ্চলে কবে কখন হোগলা পাতার উপত্তি হয় তার কোন সঠিক তথ্য স্থানীয় জনগণ জানাতে পারেনিএ সম্পর্কিত কোন তথ্য স্থানীয় কৃষি বিভাগও জানাতে পারেনিহোগলা পাতা এক ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট দশ বার ফুট লম্বা, চির সবুজ তৃণ জাতীয় উদ্ভিদএর বৈজ্ঞানিক নাম টাইফা ইলিফান্টেনা’ (Typha Elephantena).

প্রাকৃতিকভাবে এ হোগলা পাতার বন গড়ে উঠেছেসাগর থেকে এক সময় চর জেগে উঠেচরগুলো তখনো থাকে নীচু অবস্থায় জোয়ারের পানিতে ভেসে আসে হোগলার বীজএ ভাবে নতুন হোগলার ঝাড় সৃষ্টির মাধ্যমে এ বনের উত্পত্তি হয়েছেনদী বা খালের পাড়ে এবং পলিমাটি সমৃদ্ধ ভেজা মাটিতে হোগলা গাছ আপনাতেই জন্মায়হোগলা পাতা দেখতে অনেকটা ত্রিকোণাকৃতিরপাতা উত্পাদনের জন্য কোন সেচ ব্যবস্থা নিড়ানী আগাছা দমন বা কীট নাশকের প্রয়োগের প্রয়োজন হয়নাএর বংশ বৃদ্ধি সাধারণতঃ বীজ বা গাছের মূলের সাহায্যে হয়ে থাকে
হোগলা পাতা সাধারণতঃ কার্তিক অগ্রাহায়ন মাসে কাটা হয়কাটার পর পাতাগুলো রোদে শুকিয়ে চাটাই বুননের উপযোগী করে তোলা হয়হোগলা পাতা সাধারণতঃ দুই প্রকারের

১. আউশ পাতা
২. শাইল পাতা
 
রোদে শুকানোর পর পাতাগুলো হলুদ আকার ধারণ করে কার্তিক অগ্রহায়ন মাস ছাড়াও আষাঢ় শ্রাবণ মাসে একবার পাতাগুলো কাটা হয় যাতে অকেজো পাতাগুলো বাদ হয়ে নতুন পাতা গজায়

প্রক্রিয়াজাতকরণ :
 
রোদে শুকানোর পর পাতাগুলোকে ধারালো ছুরি দিয়ে লম্বালম্বী ভাবে দুইভাগ করা হয় দুইটি অংশ দিয়ে চাটাই তৈরী করা যায়মাঝখান থেকে চিকন সুতার ন্যায় একটি আবরণ বের করা হয়যা দিয়ে সিকা, দড়ি ইত্যাদি তৈরী করা যায়

পাদিত পণ্য :

হোগলা পাতা দিয়ে চাটাই তৈরীর পাশাপাশি হাত পাখা, ঝুড়ি, সিকা, বিড়া (স্থানীয় ভাষায় হোঁচ্ছা) দড়ি, টুকরি, পানের বাটা ইত্যাদি গৃহস্থালির ব্যবহার্য্য পণ্য তৈরী করা হয়

ব্যবহার বিধি :
 
হোগলা পাতার চাটাই মুসলমানদের মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা, বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়এছাড়া কোরবানের পশু জবাই করার পর মাংস কাটার কাজে ব্যবহার করা হয়ব্যবহার করা হয় মৃত ব্যক্তির দেহ মোড়ানোর কাজেশুধু যে মুসলমানরা ব্যবহার করে তা নয়, বিভিন্ন মন্দির ও গীর্জায় হোগলা পাতার চাটাই ব্যবহার করা হয়তাছাড়াও নতুন দালান নির্মাণের এবং ছাদ ঢালাইয়ের সময় ব্যবহার করা হয়  ঘরের শোভা বর্ধনের লক্ষে বিভিন্ন নকশা খচিত করে চাটাই ব্যবহার করা হয়গ্রামাঞ্চলে উননের ধোঁয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঘরের দমদমা (সিলিং) হিসাবে ব্যবহার করা হয়

 


প্রাপ্তী স্থান :

নোয়াখালীর সদর থানাধীন খলিফার হাট, বাঁধের হাট, ওদার হাট, এওজবালিয়া, বিনোদপুর এসব এলাকায় সাধারণতঃ হোগলা পাতা ব্যাপক হারে জন্মেএ এলাকাগুলো  হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পাদিত পণ্যের প্রাপ্তীর স্থান হিসাবে চিহ্নিতএছাড়াও নোয়াখালীর বিস্তীর্ণ উপকূলে হোগলা পাতা আপনাতেই জন্মে

অঞ্চলের হোগলা পাতা শিল্পের প্রধান কেন্দ্রটি খলিফার হাটে গড়ে উঠেছেসপ্তাহে রবি ও বুধবার এখানে হাট বসেে হাটের বিরাট একটি স্থান জুড়ে রয়েছে শুধুমাত্র হোগলা পাতা বেচা কেনার জন্যএ ব্যবসা গড়ে উঠেছে কয়েকটি শ্রেণীর মধ্যেএকদল মাঠে গিয়ে গৃহস্থ কৃষকদের কাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করেসে পাতা দিয়ে আঁটি বাঁধা হয়পাতার মান অনুযায়ী আলাদা আলাদা করে আঁটি বাঁধা হয়মান অনুযায়ী প্রতিটি আঁটির দামও হেরফের হয়এবং ওসব আঁটির পাতা দিয়ে তৈরী চাটাইর দামেও হেরফের থাকেসেগুলো চাটাই তৈরী করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন নারীদের কাছেবেচা কেনার আর একটি মাধ্যম হচ্ছে ব্যবসায়ীরা হোগলা বনের মালিক থেকে বিভিন্ন মেয়াদে পুরো হোগলা  বন কিনে নেয়গ্রামের নারীরাই সাধারণতঃ চাটাই তৈরী করেনসে চাটাই ফড়িয়ারা সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চালানের উদ্দেশ্যে জমা করে এবং তারাই এ চাটাই দেশের বিভিন্ন  স্থানে বাজারজাত করে

গবেষণা কালে জানা গেছে প্রতি হাটে এখান থেকে প্রায় দুথেকে তিন লক্ষ টাকার চাটাই ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফরিদপুর সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করা হয়এ নিয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় বছরে এর পরিমাণ প্রায় কোটি টাকার উপরে হরিনারায়ণপুর রেল ষ্টেশন থেকেই সাধারণতঃ এগুলো ট্রেনে বোঝাই হয়

বাজারজাত করণে ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য :
 
চাটাই শিল্পে বাজারজাত করণ তথা ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে প্রধান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী হল ফড়িয়ারাস্থানীয়ভাবে যারা দালাল নামে পরিচিতচাটাই শিল্পের সাথে জড়িত একজন নারী হোগলা পাতা কেনা থেকে শুরু করে যে পরিমাণ কায়িক শ্রম দিয়ে একটি চাটাই তৈরী করে, এ ফড়িয়াদের কারণে তারা তাদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়দেখা যায় একটা চাটাই তৈরী করতে প্রায় ৩০ টাকার পাতা কিনতে হয়তার সাথে আছে তৈরী করা পর্যন্ত পুরো একদিনের শ্রমশ্রমের বাজারের যার মূল্য সর্ব নিম্ন ৭৫ টাকাকিন্তু দেখা যায় এভাবে তৈরীকৃত চাটাই যখন বাজারে আসে তখন ফড়িয়ারা এর দাম ধরে ২০ থেকে ৩০ টাকাএ অবস্থায় দেখা যায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ফড়িয়ারাই দাম নির্ধারণ করে থাকেব্যাপারটি যে কারিগররা উপলব্ধি করতে পারে না তা নয়কিন্তু অর্থনৈতিক টানা পোড়নের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে তারা এ সমস্যা গুলোকে স্বীকার করে নিচ্ছেক্ষান্তরে লাভবান হচ্ছে ফড়িয়ারা

ফড়িয়াদের কাছ থেকে কিভাবে উত্তরণ করা যায় :
 
চাটাই শিল্পটি মূলতঃ একটি সম্ভাবনাময় শিল্পপ্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা পেলে চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা অর্থনৈতিক মুক্তিলাভ করবেযদি তারা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের উপাদিত পণ্য বাজারজাত করণের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে তাহলে ফড়িয়া নামধারীর দুষ্ট চক্রের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেএতে করে তারা বিক্রয়মূল্য সরাসরি গ্রহণ করতে পারবেতাদের উপাদিত পণ্য সামগ্রী বাজারজাত করণের লক্ষে বেসরকারী সংস্থা এন আর ডি এস (নোয়াখালী রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি) নোয়াখালীতে কুটির শিল্পীদের তৈরী বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর একটি প্রকল্প রয়েছেতাঁরা হোগলা পাতা দিয়ে উপাদিত পণ্য দেশে বিদেশে বাজার করতে আগ্রহী শুধু হোগলা পাতা দিয়েই এ এলাকায় রপ্তানীমূখী কুটির শিল্প গড়ে উঠতে পারেশহর কেন্দ্রীক এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যাদের পক্ষে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী পুরুষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা বহুলাংশে সম্ভব হয়নাএ ক্ষেত্রে এ ধরণের গবেষণার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যদি অনুঘটক হয়ে এদের তৈরী উপাদিত পণ্য বাজারজাত করণের সহযোগিতা করে তাহলে তারা বেশ উসাহিত হয়ে উঠবেন এবং ফড়িয়াদের কাছ থেকে নিজেদেরকে রা করতে পারবেনএভাবে নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন
 
একজন নারী একটি চাটাই তৈরী করে বাড়ীর পুরুষ কর্তা অথবা কোন কিশোর কিশোরী কিংবা শিশুদেরকে দিয়ে বাজারে পাঠায়সে শিশু কিশোর বা কিশোরীটি সেজে গুজে চাটাই নিয়ে বাজারে গিয়ে দাঁড়ায় তখনও সে জানেনা এ চাটাইটির ন্যায্য মূল্য কত আর এ না জানার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ফড়িয়ারা কম দামে চাটাইটি কিনে নেয়প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশু কিশোররা চাটাই বিক্রি করার জন্য বাজারে আসে এবং তারাই আবার বাজার থেকে হোগলা পাতার আঁটি কিনে নিয়ে যায়এই শিশু কিশোররা অনেকেই বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেকিন্তু হাট বাজারের দিন তারা স্কুলে না গিয়ে এই চাটাই বিক্রির কাজে ব্যস্ত থাকেসে সঙ্গে তারা বাড়ীর জন্য বাজার সদাই করে  নিয়ে যায়এদিকে এ সমস্ত হাট বাজার গুলোতে বিশেষ করে ডানিডা সহযোগিতায় নারীদের জন্য একটি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছেউদ্দেশ্য ছিলো এখানে এসে নারীরা তাদের পণ্য বেচাকেনা করবেনকিন্তু এ সেড গুলো প্রায় ফাঁকা থাকে খলিফার হাটে বাজার কটি ও স্থানীয় একটি সংস্থার উদ্যোগে চাটাই তৈরীর কাজে জড়িত নারীদের জন্য আলাদা একটি প্লটের ব্যবস্থা থাকলেও সমাজের রক্ষণশীলতার বেড়াজালের কারণে নারীরা বাজার মুখো হয়নাআর হয়না বলেই বঞ্চিত হয় ন্যায্য মূল্য থেকে ক্ষেত্রে  নারীরা নিজেরা সংঘবদ্ধ হয়ে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেযেখানে ফড়িয়ারা ছাড়া পাইকারী ব্যবসায়ীরা এসে তাদের কাছ থেকে চাটাই ক্রয় করবেএ ভাবে নারীদের নিজেদের নিয়ন্ত্রনে একটি বাজার  ব্যবস্থা গড়ে উঠবে

চাটাই শিল্পী নারীদের ধ্যান ধারণা ও চিন্তা চেতনা :

চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা অজ্ঞতা, অসচেতনতা, অশিক্ষা, ধর্মীয় গোড়ামী ইত্যাদির কারণে বিভিন্ন সনাতনী ধ্যান-ধারণা পোষণ করে আসছেতবে তাদের মধ্যে জানার প্রবল ইচ্ছাশক্তি সম্পূর্ণভাবে বিরাজমানমানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মত প্রকাশ করেনতাঁরা মনে করেন, মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য এই যে, মানুষের বুদ্ধি, বিবেক আছে, আছে বিবেচনা বোধকিন্তু পশু পাখির মধ্যে এ গুণ গুলো সম্পূর্ণ অনুপস্থিতমানুষ হিসাবে তাদের অধিকার সম্পর্কে চিন্তাগুলো খুব স্পষ্ট নয় তাদের মতে, একজন মানুষ হিসাবে বেঁচে থাকার জন্য সরকার কর্তৃক সুযোগ সুবিধা গুলো হচ্ছে অধিকার

কাজের মূল্যায়ন :

নিজেদের কাজের মূল্যায়নের ব্যাপারটি নিয়ে এসব নারীরা চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি একজন নারী শুধু কাজই করে যাবে, এমন একটি ধারণা পোষণ করে আছে তারাএরা আরো মনে করেন, শুধুমাত্র পুরুষের সেবা করার জন্যই নারী জাতির জন্ম হয়েছেগবেষণায় তারা উপলব্ধি করেন যে, কাজের মূল্যায়ন পাওয়া তাদের একটি ন্যায্য অধিকারগ্রামের কয়েকজন পুরুষের সাথে নারীদের কাজের মূল্যায়ন সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করলে তারা স্বীকার করেন যে, নারীদের কাজের মূল্যায়ন করা উচিততারা বুঝতে শিখেছে পরিবারের উন্নয়নে নারীরাও ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারেতোফায়েল আহমদ (৬০) পেশায় কৃষক, তিনি বলেন, ‘মায়েরা বেশি কাম কইত্তো, অন দেই হোলা মাইয়ার মায়েও বেশি কাম করেআসলে ঘরের মইধ্যে মাইয়াগো কামও বেশিতাঁর মতে, চাটাই বিক্রির সব টাকা চাটাই বুননকারীকেই দিতে হবেকারণ এই টাকার হক তারই সবচেয়ে বেশিপ্রতি বছর এই এলাকায় প্রায় ১ কোটি টাকার চাটাই বেচাকেনা হয়

চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে তারা কিভাবে স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে, ফড়িয়াদের কাছ থেকে উত্তরণের পথ কিভাবে তারা অধিকার করতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে তারা কিভাবে স্বয়ং সম্পূর্ণতা লাভ করতে পারে, শিশু ও বয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের ভাবনা ও করণীয় কি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলাপ হয় স্থানীয় প্রতিনিধি, বিভিন্ন পেশার লোক, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারী ও পুরুষের সাথে

উল্লেখিত বিষয় নিয়ে কালাদরাপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার উল্যা বলেন, ‘এ এলাকায় শতকরা ৮০ জন লোকই মূলতঃ চাটাই শিল্পের সাথে জড়িতএটি এখানে একদিকে যেমন এলাকার ঐতিহ্য অন্যদিকে এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের আয়ের প্রধান উত্তিনি আরো বলেন, ‘এখানে বুধ ও রবিবারে সাধারণতঃ হাট বসেতখন ছোট ছোট কিশোর কিশোরীরা মাথায় করে চাটাই নিয়ে আসেএ দৃশ্য আমার কাছে খুব ভাল লাগেদুঃখ হয় যখন দেখি চাটাই শিল্পীরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়সারা দিন কষ্ট করে বাড়ীর মহিলারা চাটাই তৈরী করে অথচ বাজারে গেলে তারা পরিশ্রম অনুযায়ী মূল্য পায়না, দালালরা (ফড়িয়া) তাদের ঠকিয়ে লক্ষ  লক্ষ টাকার মালিক বনে যাচ্ছেআর চাটাই শিল্পীদের ভাগ্যের পরিবর্তন তো হচ্ছেনা উপরন্তু তারা ক্রমশঃ দরিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হচ্ছেফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যমুক্ত হয়ে তারা কিভাবে উত্তরণ ঘটাতে পারে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত যেসব নারী পুরুষ জীবিকা অর্জন করছে তারা যদি নিজেদেরকে সংঘবদ্ধ করে (অনেকটা সমিতির মত) নিজেদের উপাদিত পণ্য সামগ্রী সরাসরি গ্রাহকদের হাতে পৌঁছে দিতে পারে তাহলে তারা ন্যায্য মূল্য তো পাবেই এমনকি এ শিল্পটি দেশে বিদেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করবে যেসব জায়গায় হোগলা পাতা উত্পাদিত পণ্যের চাহিদা রয়েছে সেসব জায়গায় কেউ যদি মধ্যস্থতা করে তাহলে তাদের ভাগ্যোন্নয়ন হওয়া তেমন কোন ব্যাপারই না

 

তিনি আরো বলেন, ‘এ এলাকায় যেসব এনজিও কাজ করে, তারা এদের উপরে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিতে ব্যস্ত অথচ তারা যদি এদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে তাহলে এরা হোগলা পাতা দিয়ে শুধু চাটাই নয়, আরো নতুন নতুন সামগ্রী তৈরী করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে

কালাদরাপ ইউনিয়নের কমিশনার আবুল কালাম চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারী পুরুষদের সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘এ শিল্পের সাথে জড়িত নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক, এখানে যারা চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত তাদের পেশাটা মার খাচ্ছে মূলতঃ দালালদের কারণেতিনি আরো বলেন, ‘ফড়িয়াদের কাছ থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে চাটাই শিল্পীদের একটি সমিতি করতে হবেআরাফাত চাটাই প্রকল্পের মালিক রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি এই প্রকল্পের মাধ্যমে এখানকার চাটাই শিল্পীদের একত্রিত করে তাদের তৈরী পণ্য সামগ্রী নিজ উদ্যোগে বাজারজাত করার জন্যকিন্তু প্রয়োজনীয় পুঁজি ও সহযোগিতার অভাবে আমি ব্যর্থ হয়েছি, এটা সফল হলে ফড়িয়াদের কাছে আর যেতে হতোনা

গবেষণার মূল ফোকাস :

নোয়াখালী সদর থানাধীন দণি পশ্চিম অঞ্চলের চরমটুয়া, ৭নং এওজবালিয়া, কালাদরাপ, বিনোদপুর ্রভৃতি ইউনিয়নের প্রায় ১ লক্ষ লোক চাটাই শিল্পের সাথে জড়িতযার মধ্যে চার ভাগের তিন ভাগই নারীকিন্তু এই বিপুল সংখ্যক নারীরা আর্থ-সামাজিকক জীবন যাত্রায় সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে

আত্মসম্মানবোধ, নিরাপত্তাহীনতা, শিক্ষাদীক্ষায়, মত প্রকাশে, চিকিসাক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় এমনকি বেঁচে থাকার জন্য যে খাদ্যের প্রয়োজন সেখানেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেনপ্রযুক্তি নির্ভর পণ্য মানুষের জীবনযাত্রাকে যান্ত্রিক করে তুলছেমুক্ত বাজার ব্যবস্থায় উত্পন্ন পণ্যের দিনদিন প্রসার ঘটছেঅন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব পণ্য ক্রমশঃ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছেএক্ষেত্রে নারীদের হাতে বোনা চাটাই অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবেঅথচ বিপুলভাবে অবমূল্যায়ন  হচ্ছে চাটাই   শিল্পের   সাথে  জড়িত নারীরাচরম দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন তারাতবুও উত্তরাধীকার সূত্রে এই দরিদ্র নারীরাই এই ঐতিহাসিক শিল্পের ধারক ও বাহকতাদের এই শিল্প চর্চা হাজার বছর ধরে প্রচলিত প্রাকৃতিক বিজ্ঞান মানসিকতার পরিচয় দেয়এই শিল্পের মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচিত করে তুলতে পারেসেই সঙ্গে এই শিল্পের সাথে জড়িত নারীদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে

প্রশিক্ষণ, পূঁজি, বাজারজাতকরণ :

চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত নারীরা চাটাই তৈরীতে অত্যন্ত দক্ষএর জন্য তাঁরা কোন প্রশিক্ষণ পাননিবংশ পরম্পরায় তারা এ কাজে দক্ষতা অর্জন করেছেনহোগলা পাতা দিয়ে যে অন্যান্য পণ্য বানানো যায় এবং তার অনেক বাজার মূল্য আছে এ বিষয়ে তাঁরা একেবারেই অজ্ঞ গবেষণায় দেখা গেছে সামান্য প্রশিক্ষণ পেলে এ নারীরা বিভিন্ন সৌখিন দ্রব্য তৈরীতে সম হবেনআন্তর্জাতিক বাজারে এগুলো রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভবসিলেটের পাহাড়ী জনগোষ্ঠি বিশেষ করে খাসিয়ারা এই চাটাই ব্যপক ভাবে ব্যবহার করেতাদের মধ্যে এর ব্যপক চাহিদা রয়েছেপান পাতা মোড়ানোর জন্য সাধারনত এগুলো ব্যবহার করা হয়তাছাড়া সীমান্তের অপর পাড়ে চাটাই প্রচুর চালান হয়ঘরের দৈনন্দিন কাজেও খাসিয়াদের মধ্যে চাটাই খুব জনপ্রিয়নোয়াখালীর এই চাটাই সিলেট হয়ে খাসিয়া পুঞ্জিতে সরবরাহ হ
 
উপকূলীয় অঞ্চলে যেহেতু এই গাছ আপনাতেই জন্মে সুতরাং চাষের জন্য এর একেবারেই খরচ নেইহোগলা গাছের পাতা পোক্ত হলে মাটির উপর থেকে গোড়া বা মূল রেখে কেটে নিলে তা থেকে আপনাতেই গাছটি আবার জন্ম নেয়খরা বা বর্ষায় এ গাছের কোন ক্ষতি হয়নাযে কোন পরিবেশে গাছটি দীর্ঘজীবীএক শত টাকা মূল্যের একটি চাটাই বুনতে পঁচিশ থেকে ত্রিশ টাকার হোগলা পাতার প্রয়োজন পড়েনারীরা ঘরে বসেই দক্ষ হাতে প্রতিদিন দুই তিনটি চাটাই বুনতে পারেনপ্রতি সপ্তাহে স্থানীয় বাজারে এগুলো বিক্রি করা যায়এ হিসাবে যে কোন নারী খুবই সামান্য পুঁজি নিয়ে এ কাজটি করতে পারেন

 

কেস স্টাডি


জনপি বেগমের জনপ্রিয়তা

মাত্র বার বছর  বয়সে বিয়ে হয়ে যায় জনপি বেগমেরজনপিদের ছিলো অভাবি সংসারতার উপর মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে যেন সে নিজেই বড় একটা অপরাধ করে ফেলেছেজীবন সম্মন্ধে কোনো কিছু বুঝার আগেই বাবা মা বিয়ে দিয়ে দেয় তাকেএ অবস্থায় শিশু বয়সেই পুতুল খেলা ছেড়ে জনপি চলে যায় শশুর বাড়ির অজানা পরিবেশেসেখানেও অভাবের সংসারস্বামী নূরুল আমিন শিক্ষা দীক্ষ হীন বেকার যুবকগায়ে গতরে খেটেই চলতে হয় তাদেরএ ভাবেই অভাবের ঘানি টেনে চলছিলো তারাসংসার সম্মদ্ধে অনভিজ্ঞ জনপিএ অভাবি সংসারের মাঝে একে একে যোগ হয় আরো সাত সাতটি সন্তানেরচোখে মুখে অন্ধকার দেখে জনপি বেগমনোয়াখালীর সদর উপজেলার পশ্চিমে কালাদরাপ ইউনিয়নের রাহামুড়ি তালু গ্রামে জনপির জরাজীর্ণ কুটিরঅভাবের সে সংসার যেন আর চলতে চায়নাঅন্ধকার যখন সব কিছু গ্রাস করে নিচ্ছিলো তখন এক কঠিন বাস্তবতার মধ্যে নিজেকে দাঁড় করায় জনপিএলাকার নারীরা সবদিক দিয়ে পিছিয়েএদের উপর রয়েছে সমাজের এক অঘোষিত বিধিনিষেধজনপি সে বিধিনিষেধকে অগ্রাহ্য করে নেমে পড়ে নিজ ভাগ্য গড়ার ব্রত নিয়ে 
 
নোয়াখালীর উপকুলীয় এ অঞ্চলে প্রচুর হোগলা পাতা জন্মে এখানকার অনেক নারী এই হোগলা পাতা দিয়ে চাটাই বানিয়ে  কিছুটা আয় করতে চেষ্টা করে এলাকার ঐতিহ্য অনুযায়ী জনপি বেগম ছোটকাল থেকেই হোগলা পাতার চাটাই বানিয়ে আসছিলো জনপি  দেখলো দিনরাত কষ্ট করে  নারীরা হোগলা পাতার চাটাই বানায়তারা এতো পরিশ্রম করেও সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়এখানে তৈরী করা হোগলা পাতার চাটাইয়ের সারা দেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এই এলাকা থেকে প্রচুর চাটাই দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয় এখান থেকে সবচেয়ে বেশী যায় সিলেট অঞ্চলেএই চাটাই এর বাজারটি নিয়ন্ত্রনে রেখেছে এক দল ফড়িয়া আর দালাল চক্রতারা প্রতিটি বাজার থেকে কম মূল্যে চাটাই কিনে অধিক মুনাফায় এগুলো বিক্রি করেজনপি দেখলো  ফড়িয়াদের পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন বাজারে এগুলো বিক্রি করলে সে আরো বেশী লাভবান হতে পারবেশুরু হলো জনপির পরিশ্রমের পালা এলাকায় যে সব নারীরা চাটাই বানায়, তারা সাধারনতঃ সংসারের নানান কাজের পরে প্রতিদিন দু একটি করে চাটাই বানিয়ে সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি করেএতে সংসারের টুকটাক খরচ চলে
 
গ্রামের নিচু জমিতে সাধারন ভাবে উপন্ন হোগলা পাতার উপর অনেকেই জীবিকা নির্ভর করেহোগলা পাতা সংগ্রহ করতে বা কিনতে যে টাকার প্রয়োজন পড়ে জনপি সে সামান্য টাকাও জোগাড় করতে পারেনাতাই বলে গ্রামের অসহায় অবলা নারী হয়ে হা- হুতাস করে ঘরে বসেও থাকেনিপ্রথমে  পাশের জমির মালিক থেকে বেশী দাম দিয়ে বাকীতে পাতা কিনে চাটাই বনানো শুরু করেনবুনতে বুনতে সে এ কাজে প্রচুর দক্ষ হয়ে উঠেনদিনরাত পরিশ্রম করে সে প্রতিদিন সর্বোচ্চ সাত আটটি চাটাই তৈরী করতে লাগলোএতে প্রতি হাটে পঁচিশ থেকে ত্রিশটি চাটাই বিক্রি করতে থাকেপ্রতিটি চাটাই থেকে সে লাভ করে বিশ থেকে পঁচিশ টাকাএভাবে প্রতি হাটে সে আয় করে সাত শথেকে আট শটাকাতার বাড়ীর কাছে রয়েছে খলিফার হাটপ্রতি সপ্তাহে এখানে দুবার হাট বসেএ বাজার থেকেই প্রতি মাসে আয় হয় চার পাঁচ হাজার টাকাঅভাব যেন আস্তে আস্তে পালাতে থাকে তার ঘর থেকেএ অবস্থায় তার নিজের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়বিপুল উসাহ উদ্দীপনায় সে এ কাজে অরো বেশী মনোযোগ দিতে থাকেতার এ কাজ দেখে আসে পাশের মানুষ আরো আগ্রহী হয়ে উঠে এ কাজ সে শুধু একাই করছেনা আশে পাশের অন্যদেরকেও সম্পৃক্ত করে নিচ্ছে  শুধু চাটাই  মধ্যে জনপি তার কাজ সীমাবদ্ধ রাখেনিনানা রকম টুকরি ঝুড়ি ইত্যাদি সে নিজের উদ্ভাবনী মেধা দিয়ে তৈরি করে নিয়েছেযেগুলো মানুষের সংসারের বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন পড়েমানুষের কাছেও এগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছেতার এ কাজে স্বামী নুরুল আমিন আস্তে আস্তে সহযোগীতা করতে লাগলোএক সময় নুরুল  আমিন পুরোপুরি ভাবে এ কাজে জড়িয়ে পড়েদুজনে  এক সঙ্গে কাজ করাতে কাজের গতিও বেড়ে গেলোআয়ও হতে লাগলো আগের চেয়ে বেশী১৯৯৩ সালের দিকে তাঁরা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পুরো পুরি  চাটাই ব্যবসা শুরু করেন নিজেদের বানানো এবং স্থানীয় বাজার থেকে কেনা চাটাই নিয়ে প্রথমে সিলেটে নিয়ে বিক্রি করেনএতে প্রচুর লাভ  হয়তবে তারা বলে, এ কাজে লাভ লোকসানও আছেকারন সময় বুঝে পাতার দাম উঠানামা করেতখন সাবধানে বেচা বিক্রি করতে হয়বাজার না বুঝলে লোকশানও গুনতে হয়জনপি বেগম বলেন,‘আল্লার তান দাড়ি হাতা মাডে হড়ি রইছে, এ গুন দি আঙ্গো রিজিক চলেএ হাতা দি বেরেন খাটাইলে আঙ্গো অভাব   থায়নি ? অর্থা খোদা তালার দান মাঠে পড়ে আছে, এ গুলো দিয়েই আমাদের রিজিক চলে, আমরা যদি মাথা খাটিয়ে এর সদ্ব্যবহার করতে পারি , তাহলে আমাদের কি আর অভাব থাকে’ ? জনপি বেগম বলেন, এ এলাকার প্রায় আশি হাজার মানুষ চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেএলাকার প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি নারী চাটাই শিল্পের সাথে জড়িতশিশু কাল থেকেই নারীরা চাটাই তৈরিতে হাতেখড়ি নেয়
 
জনপি বেগমের বড় দুই ছেলে এল্যুমিনিয়ামের হাড়ি পাতিলের ব্যবসা করেজনপি বেগমই তাদের ব্যবসা ধরিয়ে দিয়েছেএলাকায় জনপি এখন খুব জনপ্রিয়বুদ্ধি পরামর্শের জন্য সবাই তার কাছে ছুটে আসেজনপি বেগমকে এখন এলাকার সবাই ডাকে জনপ্রিয়বেগম সবারমুখে এ নাম তিনিও খুব খুশি

কেইস্ স্টাডি - ২

জাকেরা বেগমের আশা ভঙ্গের গল্প
 
একটি সুন্দর সংসারের স্বপ্ন দেখতো জাকেরা বেগম (২৫)ভালো উপার্জন করবে তার স্বামীসংসারকে নিজ হাতে গড়ে তুলবে সেকিন্তু মানুষ ভাবে এক আর সৃষ্টিকর্তা তার বিপরিত ভাগ্য নির্ধারণ করে রাখেএকদিন হঠা করেই বিয়ে হয়ে যায় জাকেরারবিয়ের পর কিছু দিন বাপের বাড়িতে ছিলো জাকেরাকয়দিন যেতে না যেতেই স্বামীর বাড়ি গিয়ে জাকেরা জানতে পারে, স্বামী নূরুল আমিন এর আগে আর এক বিয়ে করেছে শুধু তাই নয়, সেই ঘরে তিন তিনটি সন্তানও রয়েছকিন্তু এ বিষয়টি জাকেরার অভিভাবকরা কেউ জানতোনারাগে দুঃখে অপমানে জাকেরা নিজেকে নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিলোতার সুন্দর সংসারের স্বপ্ন নিমেষে খান খান করে ভেঙ্গে পড়লোআর দেরি নাকরে জাকেরা ফিরে আসে বাবার বাড়িতেনতুন করে স্বপ্ন দেখারও সাহস করেনি আরঅনুন্যপায় হয়ে নিজের বিয়ের ভাগ্যকে মেনে নিতে বাধ্য হয়সিদ্ধান্ত নেয় বাবার বাড়ি থেকে আর ফিরে যাবে না সেএর পর স্বামীর বাড়িতে আর পা বাড়ায়নিবাবার বড়িতে থেকেও কি করবে কিছুই বুঝতে পারেনাকিছুদিন পর স্বামী তাকে নিতে আসেকিন্ত জাকেরা  তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে মনে প্রাণে দেহে যখন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হলো তখন চাটাই পাতার মধ্যে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে জাকেরাছোট কাল থেকে হাতে খড়ি নেয়া চাটাই বুনোনের কাজে আবার নেমে পড়লো সেমাঝে মাঝে স্বামী এসে দেখা করে যায়বাবার বাড়িতে বসে স্বামীর কাছ থেকে নিজের খরচের টাকা নিতে অপমান বোধ করলো সেইতিমধ্যে তিন তিনটি সন্তান আসে তার কোলে এদের সবার ভরন পোষন খরচাদি সে নিজেই বহন করেএক মাত্র চাটাই বানিয়েই  সে এগুলো উপার্জন করছেএর জন্য তাকে দিন রাত করতে হচ্ছে কঠোর পরিশ্রমজাকেরা জানায় প্রতি হাটে ফড়িয়ারা তার কাছ থেকে চাটাই কিনে নিয়ে যায়সরাসরি বিক্রি করতে পারলে তার অরো লাভ থাকতোএতো পশ্রিম করেও জাকেরা খুব সন্তুষ্ট কারন সে মনে করে সামান্য করে হলেও চাটাই বানিয়ে সে আজ একজন আত্ম নির্ভরশীল নারীঅন্যের দ্বারস্থ না হয়ে  নিজ সম্মান নিয়ে সমাজে মাথা তুলে চলছেতার আগামী স্বপ্ন তিনটি সন্তানকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করে গড়ে তুলবে

কেইস্ স্টাডি - ৩

হাজেরা খাতুনের দিন কাল

কটুও সময় নেই হাজেরা খাতুনের৬০ বছর বয়সেও মুক্তি নেই তারবৃদ্ধ বয়সে এসে তার জীবনটা অষ্টপৃষ্টে মিশে গেল হোগলা পাতার সাথেকাজের সময় কারো সাথে মাথা তুলে কথা বলতে চায়না বিবি হাজেরা কথা বললে তার সময় নষ্ট হবেচাটাই বুনতে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে হাজরা তিন সন্তানের জননীস্বামী মৃত আবদুল লতিফ চাটাই ব্যবসায়ী ছিলেনচার বছর আগে এক অসুখে মারা যানস্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারে এক মহা দুর্যোগ নেমে আসে দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য বৃদ্ধ বয়সে চাটাই বুননের কাজ শুরু করতে হয় তাঁকে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে হাজেরা খাতুন জনান, যত দিন বেঁচে থাকি ততদিন আমাকে কষ্ট করে যেতে হবেসংসারে স্বামী না থাকলে নারীদের জীবন আঁধারবড় ছেলে বিয়ে করে বৌ-নিয়ে আলাদা হয়ে গেছেআর এক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নিজের কাছে রাখলেনএখন মা আর মেয়ে মিলে চাটাই তৈরি করেনহাজেরা সপ্তাহে দুই দিন চাটাই নিয়ে খলিফার হাট বাজারে যানচাটাই বিক্রি করে আবার পাতার আঁটি কিনে আনেনতিন দিনে হাজেরার ৫০ টাকার মত  লাভ হয়তিন দিনে এ টাকায় কিছুই হয়নাঅবশ্য মেয়ের জামাই মাঝে মাঝে সাহায্য করেচৈত্র বৈশাখ মাসে হাজেরার বেশি কষ্ট হয়ঐ সময় আবহাওয়ার জন্য চাটাই কম তৈরি করতে পারেসে সময় তাঁর আয় কম হয় তাই না খেয়ে থাকতে হয় দিনের পর দিনকয়েক দিন আগে মেম্বারের কাছে গিয়েছিলেন ভি,জি,এফ কার্ড করার জন্যকিন্তু মেম্বার তাকে কার্ড করতে দেন নি , তার ছেলে আছে বলেএ দিকে বিধবা ভাতা বয়স্ক ভাতা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে হাজেরা খাতুন

কেইস্ স্টাডি - ৪

নূর েছার হারিয়ে যাওয়া শৈশব

চাটাই শিল্পী নুর নেছা (২০)মুখের দিকে তাকালে মনে হয় যেন জীবনের সব চেয়ে বড় কিছু হারিয়ে ফেলেছেহাজার প্রতিকুলতার মাঝেও নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে এক কঠিন বাস্তবতায় বিয়ের পর থেকেই চাটাই বুননের কাজে লেগে যায়চাটাই বুনে আর মনের দুঃখে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায়নূর নেছা বলে,‘ আমার মা আমাকে বিয়ে দেয় ইট ভাটায় কাজ করে এমন এক ছেলের সাথে যখন বিয়ে হয় তখন বয়স ছিলো ১১ বছর  বিয়ের মর্ম সে সময় সে কিছুই জানতোনাশশুরালয় গিয়ে দেখে বৃদ্ধ শশুর আর শাশুড়ীর সাথে এক ননদিনী আছেসে জানত না এদেরকে কি করতে হবে কিংবা স্বামী সহ সকলকে সেবা দিতে হবে কি ভাবেএ সময় শাশুড়ী তাকে জানায় কাজ না শিখে বাবার বাড়ী থেকে আর  আসবে নাতখন নুর নেছা বাবার বাড়ীতে এসে আর শশুরালয় যায়নিনুর নেছার মা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে মনে হয় শাস্তি পেলেনকারণ তার বাবা নেই মা বৃদ্ধ মানুষকখন কোন মূহুর্তে মারা যায়, সব সময় সে  ভয় তার মধ্যে কাজ করেনূর নেছার স্বামী তাকে অনেক মার ধর করত কারণ সে এলো মেলো চলততখনও সে ছিল অন্য শিশুদের খেলার সাথি কি করে সে স্বামীর সংসার করবে সে জ্ঞান টুকু তার ছিলোনাপায়ে পায়ে তার বয়স বাড়তে  থাকেএকদিন সে বুঝতে পারলো সে মা হতে চলছে  কোল জুড়ে তার সন্তান এলোএকে একে  এদের লালন পালন করতে হবে তাকে অতি কষ্টে জানান, ‘যদি এত অল্প বয়সে বিয়ে না হত তাহলে স্বামীর সংসারে গিয়ে আরো ভালো থাকতামএখন জীবনকে  মিশিয়ে দিলাম চাটাইয়ের সাথে


                                        
 
কেইস্ স্টাডি - ৫

কিশোরী নূর নাহারের দুঃখ

কিশোরী নুর নাহার (১৩) আপন মনে চাটাই বানিয়ে যায়নোয়াখালী সদরের রাহাতালু গ্রামের বাবা মা হারা এক অসহায় কিশোরী মেয়েজন্মের পর পরই তার বাবা মা ইহ লোক ত্যাগ করেন  মা শফিয়া খতুনের কথা মনে হলে পৃথিবীর সব কিছু বিষাদ মনে হয়মাও ছিলো তার চরম দুঃখিনী মা বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইয়ের সংসারে স্থান হয়ভাইও থাকে ভাইয়ের শশুর বাড়ীতে কিন্তু সেখানে সে ভাইয়ের বোঝা হয়ে থাকেনিপড়া লেখা করার খুব সখ ছিলো তার  বাড়ির আসে পাশের মেয়েরা যখন  দল বেঁধে স্কুলে যায়,তখন তার ইচ্ছা  হয় ওদের সঙ্গে দল বেঁধে ্কুলে যেতেকিন্তু তার অগেই তাকে ঢুকতে হয়েছে জীবনের আরো কঠিন বাস্তবতায়নূর নাহার জানায় প্রতিদিন তিনটির মত চাটাই সে বানাতে পারে  এজন্য তাকে সকাল সন্ধ্যা কঠোর পরিশ্রম করতে হয়প্রতি হাটে চাটাই বিক্রি করে সে এক দেড়শটাকা পায় এতে তার নিজের খরচ কোনো রকমে চলে যায়নূরনাহার বলে, ‘আল্লাহ আমাকে অসহায় বানিয়ে এ দুনিয়াতে ছেড়ে দিয়েছেনএখন মা বাবা কে নিয়ে ভাবার কোন সুযোগ নেইঅবুঝ থাকতে মা বাবা মারা যায়তাদের চেহারা কেমন তারা কেমন ছিলকে আমাকে ছোট থেকে বড় করলকে আমাকে আদর যত্ম দিয়ে বড় করল এ প্রশ্ন সব সময় মনের মধ্যে তাড়না করে আর তখনই অসুস্থ্য হয়ে পড়িতখন কেউ বুঝাতে চাইলেও বুঝতে পারিনা, কষ্টে বুক ভেঙ্গে যেতে চায়, যখন মনে হয়,এই পৃথিবীতে  মা বাবাকে কোনোদিন আর দেখব না
 
নূর নাহার বলেন,‘বড় ভাইয়ের শশুর বাড়ীতে থাকি চাটাই বানাই  প্রতি হাটে চাটাই বিক্রি করে নিজের জীবন জীবিকা নির্বাহ করিআমি প্রতি দিন তিনটা পর্যন্ত চাটাই বানাতে পারিপ্রতিহাটে আমার ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা লাভ হয়আমি আমার নিজ খাওয়া  পরার কাপড় যোগাড় করতে হয়ভাইয়ের শশুর বাড়ীর লোকেরা যেন আমাকে কিছু বলতে না পারে, সেটা আমি খুব খেয়াল রাখি
 
নূর নাহার আপে করে বলে, ‘পড়া শুনা করি নাইতবে স্কুলে যাওয়ার শখ ছিলআপনাদের মত কাগজ আর কলম নিয়ে লিখতে আমার খুব শখ হয়যদি লিখতে পারতাম তাহলে নিজের জীবনী লিখে সবাইকে পড়ে শুনাতামএই পৃথিবীটা আমার কাছে অন্ধ মনে হয়কারণ আমার একটাই কষ্ট, আমার বাবা মা  আজ কোথায়আমি সবার কাছে দোয়া চাই আল্লাহ্ যেন আমার জীবনটা মান সম্মান নিয়ে কাটিয়ে দেয়


কেইস্ স্টাডি-৬

খতিজা বেগমের আপে

খতিজা বেগমের (৩০) যখন বিয়ে হয় তখন সে হোগলা পাতার কাজ জানতোনাহোগলা পাতা দিয়ে যে চাটাই  বানায় এ বিষয়টিও সে আগে জানতোনানোয়াখালীর এওজবালিয়ায় যে নারীই বৌ হয়ে আসেনা কেন তাকে চাটাই বানাতে হয়এটি এ এলাকার রেওয়াজআগে ভাগে কেউ যদি না শিখে থাকে তাহলে তাকে এখানের কারো কাছ থেকে চাটাই বুনন শিখে নিতে হয়খতিজা যখন নতুন বৌ হয়ে রিক্সায় করে হেগলা বনের ভিতর দিয়ে আসছিলো, তখন রিক্সাওয়ালা রিক্সা টানতে টানতে মজা করে বলছিলো, হোগলা পাতা নতুন বৌকে শশুর বাড়ি যেতে দিচ্ছেনাহোগলা পাতার বনের মধ্যদিয়ে যেত যেতে খতিজা ভাবছিলো, এলাকার নারীদের মত যদি সে হোগলা পাতার চাটাই বানাতে পারতো তবে সে নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করতোখতিজা বেগম বলে ইয়ানে য্যাতেই আইব হেতারেই চাডাই বানাইত অইবআগে না শিখা থাইকলে অন এতাগোত্তুন শিখতো অইবশশুর বাড়িতে এসে দেখে এখানে সব নারীরাই চাটাই বুননে পারদর্শী
 
এখন চাটাই বানিয়ে খতিজা খুব সন্তুষ্ট নয়কারণ সে যদি অন্যদের মত প্রতিদিন ৩/৪ টি চাটাই বানাতে পারতো তাহলে তার খুব আনন্দ হোতখতিজা সারা দিনে একটাও বুনতে পারেনাকারন চাটাই বুননে সে তত পারদর্শী নয়খতিজার বর্তমানে ৩ ছেলে ২ মেয়েসে জানায়,‘ তারা আমার থেকে অনেক বেশি ভালো চাটাই বানাতে পারেতারা ভাই বোন মিলে দিনে ৫/৬ টি চাটাই বানাতে পারেখদিজার স্বামী চায়ের দোকানে কাজ করেতার সাথে সাথে চাটাই বুনতে খতিজাকে সাহায্য করেচাটাই বুনা হয়ে গেলে স্বামী বাজারে বিক্রি করেকখনো কখনো তার বড় মেয়ে রিংকু (১০) বাজারে গিয়ে চাটাই বিক্রি করে আসেরিংকু প্রাইমারি স্কুলে ৫ম শ্রেণীতে পড়েসে চাটাই বুনতে এখন খেকেই অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেচাটাই বানাতে সে মা ও বড়দের সাহায্য করে


কেইস্ স্টাডি -

আনোয়ারার সুখের সংসার

নোয়াখালী  কালাদরাপ ইউনিয়নের রাহামুড়িতালু গ্রামের আনোয়ারার বিয়ে হয়েছিলো মাত্র তের বছর বয়সে এ গ্রামেই তারজন্ম  ছোট্ট কাল থেকে সে দেখে আসছে গ্রামের প্রায় সব নারীই চাটাই বানাতে পারেগ্রামের অনেকেই দল বেঁধে এক সাথে বসে চাটাই এর কাজ করেএ দৃশ্য দেখে তার খুব ভালো লাগতোছোট বয়সেই সে চাটাইয়ের কাজ শিখে নিয়েছেএ কাজে তাকে বড়রা খুব সহযোগীতা করেছিলোবিয়ের পাঁচ বছর পরে তারকোল জুড়ে আসে তাদের প্রথম সন্তান আনোয়ারার স্বামী ছোট একটা চায়ের দোকান করেসারাদিনের ঘর কন্যার কাজ করে আনু বসে যায় চাটাইয়ের কাজনিয়েসারা দিনে সে যে চাটাই বানায় সেগুলো প্রতি হাটে তার স্বামী বিক্রি করেবিক্রির টাকা তারা অন্য কোনো কাজে খরচ না করে নিজেদের কাছে জমা রাখছে তাদের ইচ্ছা সে টাকা দিয়ে তারা নতুন টিনের ঘর তৈরী করবেসে আশায় আশায় তারা দিন গুনছে  আরো স্বপ্ন দেখে কবে তাদের মেয়ে বড় হবেচাটাই বানানোর টাকা দিয়ে মেয়েকে অনেক দুর পর্যন্ত পড়ানোর ইচ্ছা আছে তাদেরআনু জানায়, ‘স্বামী স্ত্রী মিলে এক সাথে কাজ করলে সংসারে কোনো অভাব থকেনাদুজনে সমঝোতার মাধ্যমে চলতে পারলে সংসারে উন্নতি লাভ করা যায়আনু বলে ,‘গেরামের হোগলা পাতা আঙ্গোরে বাঁচাই রাখছেচাটাইয়ের কাজ করতে পেরে সে খুব খুশী  আনু জানায় ,‘আমি এখন খুব সুখীআমার মনে হয় আমার মত আর কেউ এতে সুখী নয়


কেইস্ স্টাডি - ৮

চাটাই বুনে শশুরের ঋণ শোধ করলেন মারজাহান

কষ্টকে মোকাবিলা করতে হলে সংগ্রাম করতে হবেসে নারী হোক, আর পুরুষ হোককথাটা বললেন মারজাহান (২৫)মারজাহান ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া লেখা করেছেনমারজাহান বিয়ের আগে কোন দিন চাটাই তৈরি  করে নিবিয়ের পরে স্বামীর সংসারে এসে দেখতে পায় চাটাই বানানো ছাড়া আর কোন উপায় নেইঅন্য সকলের জন্য সেও চাটাই বানানোর কাজ হাতে নিলপ্রথমে তার খুব কষ্ট হয় মারজাহান আরো জানায়, তার শ্বশুরের মৃত্যুর আগে অনেক টাকা ঋণ করে গেছেনতাদেরকে এ ঋণের বোঝা বইতে হয়েছে১৮ হাজার টাকা ঋণ শোধ করতে হবেএ অবস্থায় মারজাহান গ্রামীণ ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেয় ১০ হাজার টাকাশর্ত ছিল গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা এক বসরে শোধ করতে হবেমারজাহান চাটাই বানিয়ে প্রতিহাটে তা বিক্রি করতো এ টাকা জমা করে প্রতি সাপ্তাহে কিস্তিতে শোধ করতোএভাবে প্রথম বছর ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শ্বশুরের ঋণের টাকা শোধ করলেনতিনি জানান গ্রামীণ ব্যাংক আমাকে সহযোগিতা করেছে আবার চাটাই তৈরিতেও সহোযোগিতা করেছেএকদিকে সুখী আবার অন্য দিকে অসুখী
 
অসুখী কেন জানতে চাইলে বলে, ‘এই যে সারাদিন চাটাই তৈরি করি সাথে অন্য সব কাজ করে থাকিকোমর ব্যাথা সব সময় লেগে থাকেভালো ডাক্তার দেখানোর কোন সুযোগ নেই ডাক্তারের যে খরচ সে খরচ বহন করার মত স্বামীর আয় নেইতাই ভালো ডাক্তার দেখাতে পারি না
 
স্বামী বাহার উদ্দিন জানায় আমাদের পড়া লেখা নেই তাই আমরা কোন দিন বড় হতে পারবো নাআমরা এমনই থাকতে হবেযদি পারি আমাদের         
সন্তানদেরকে নিয়ে চেষ্টা করব পড়া শুনা করাবার জন্য

কেইস্ স্টাডি - ৯

নূরজাহানের দুঃখ জয়ের গল্প

সময় মানুষকে বদলাতে পারেকিন্তু তার জন্য নীরবে যুদ্ধ করতে হয়আর এ যুদ্ধ মানুষকে বড় করেআবার  কখনো পতন ঘটায়তেমনি এক নারী নুরজাহান (৩৫)জীবন ভর  যুদ্ধ করে যাচ্ছে নিজেরই জীবনের সাথে এক সময় চাটাই বানিয়ে  কোন রকমে ৯ সদস্যের পরিবারের ভরন পোষন চলত  এতে  যে  টাকা পাওয়া যেতো , তাতে নিদেনপে আধমুঠো খাওয়ার জুটতো কখনো কখনো পেট ভরে খাওয়ার সুযোগ হয় নি কোনোদিনএকদিন স্বামী আবছার তাকে  ডেকে বলে চলো আমরা চিটাগাং চলে যাই, ওখানে আমরা দুজনে কাজ করবোসাথে আমাদের বড় ছেলেও থাকবেআমরা ভালো আয় করতে পারবনোয়াখালীর সদরের কালাদরাপ ইউনিয়নের এওজবালিয়া গ্রামের সহজ সরল কুল বঁধূ নুরজাহান স্বামীর সঙ্গে পুরো পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম চালে যায় সেখানে অজানা অপরিচিত পরিবেশ  প্রথম প্রথম খুব  কষ্টের মধ্যে পড়ে তারাকখনো কখনো প্রতিদিনের খাওয়ারও যোগাড় হতোনানুরজাহান নোয়াখালী থেকে যাওয়ার এক বছর পর চট্টগ্রাম নাছিরাবাদ এলাকায় ইট ভাঙ্গার কাজ নেয়বড় ছেলে রাজ জুগালীর কাজ শুরু করে এভাবে কোনদিন একশআবার কোন দিন পঁচাত্তর আশি টাকা আয় করতে থাকে  শরীর ভালো থাকলে দুইশটাকাও রোজগার হয়এ টাকায় প্রতিদিনের খরচ মোটামুটি চলে যায় তাদের
 
নূরজাহান বলে, আমি যদি এই চাটাইয়ের উপর নির্ভর থাকতাম তাহলে প্রতিদিনের খাওয়ার নিশ্চিত করতে পারতাম নাতার কষ্টের কথাগুলো বলতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে ফেলেসংসারের একটু স্বছলতা দেখে স্বামী আবছার তাঁকে রেখে আবার বিয়ে করে ফেলে   এতে নুরজাহান বাধা দিলে সংসারে নেমে আসে অশান্তিনুরজাহন চিন্তা করেন যদি স্বামীকে বাদ দিয়ে দেই তাহলে  লোকে আমাকে খারাপ বলবে, কিন্তু আমার সংসারে শান্তি হবে  তার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী তাকে খুব অত্যাচার করতে থাকে সতীন তাঁর ভাইদের কে দিয়ে নূরজাহানকে  মারধর করেনূরজাহান সব কিছুকে ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করে নূরজাহান সে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে বলে কয়ে স্বামীকে আবার সংসারে ফিরিয়ে আনেনঅবস্থার বেগতিক দেখে নূরজাহানের সতীন তাদের ছেড়ে চলে যায়তার স্বামী অনুতপ্ত হয়ে তার কাছে হাত জোড় করে মা চায়  সে যে ভুল করেছে তা সে বুঝতে পারেনুরজাহান বলেন, ‘এতেই আমি খুশীভাঙনের মুখোমুখী হয়েও তিনি বিচলিত হননিঅসীম ধৈর্য্য ধারন করে  নূর জাহান তার গড়া সংসারকে  শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হোলেননূরজাহান বলেন,‘আল্লার দুইন্নাইত ম্যাইনসের সংসারের মাইদ্দে ব্যাস-কম ঝামিলাতো আছে, এগুলার লগে যুদ্ধ করি টিকতো না পাইরলে কপালে দুঃখ লই থাইকতে হয়অর্থা নূরজহান বলছেন, আল্লার দুনিয়াতে মানুষের সংসারের মাঝে কম বেশী  ঝামেলাতো আছে, এর সাথে যুদ্ধ করে টিকতে না পারলে কপালে দুঃখ নিয়ে থাকতে হয়

কেইস্ স্টাডি - ১০

চাটাই ব্যবসা করে আত্ম নির্ভরশীল

বাপ দাদার আমল থেকে শুরু হল এ কাজতাই আমরা আর অন্য কাজে যাই কি ভাবে, হোরন বলে, ‘ছোট্ট বেলা থেকে আমি চাটাই তৈরি করতাম আমার মায়ের সাথেআমরা দুই ভাই এক বোনআমি সবার বড়আমার বয়স যখন ১৮ বছর তখন আমার বাবা মারা যায়বাবা মৃত্যুর সময় রেখে গেছে একটা ভিটা তিন ভাই বোন আর মাকে নিয়ে আমাদের সংসার  হোরণ বলে, ‘বাবার চাটাই ব্যবসার হাল ধরতে হল আমাকেচাটাই বানানো, সংসারের দায়িত্ব , ঋণের বোঝা, সবকিছু ছিল  আমার মাথার উপর  সব সময় চিন্তা থাকতো কিভাবে এ সব মোকাবিলা করা যায়
 
বাবার মৃত্যুর এক সপ্তাহ পরে আমি নিজে সাহস করে হাটে গিয়ে ৭ হাজার  টাকার চাটাই কিনে আনিএ চাটাই গুলো নিয়ে যাই সিলেটে, তখন থেকে আমার সাহস বেড়ে যায় এবং ব্যবসার সম্পর্কে মোটামুটি বুঝতে পারিপ্রথম ৭ হাজার টাকায় লাভ হয ২ হাজার টাকাপ্রথম বারই সিলেট থেকে আসার সময় মাস্তানরা আমাকে ধরে সব টাকা নিয়ে যায়বাড়ীতে এসে যখন মাকে জানালাম মা আমাকে সান্তনা দিয়ে বলেন, ‘মরা গ্রামীণ ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণনিয়ে আবার ব্যবসা করবঋণ নেয়া হলো  ১০,০০০/- টাকা , ৫ হাজার টাকা চাটাই কিনে আর বাকী টাকা থেকে বাবার কিছু ঋণ শোধ করেছি  কিছু টাকা দিয়ে হোগলা পাতা কিনা হলো ঘরে চাটাই তৈরি করার জন্যমা এবং আমার বোন সে পাতা দিয়ে চাটাই তৈরী করলএকটি চালান নিয়ে আবারও আমি সিলেটে নিয়ে যাইএবার আমার টাকায় টাকা লাভ হয় বাড়ী  এসে সব কটি টাকা মাকে দিয়েছিমা আমার গায়ে হাত বুলিয়ে বলে তোদের বাবা নেই তাতে কি হয়েছে আমার ছেলেতো আছেআমার মায়ের দোয়ায় আজ আমি অনেক ভালো আছিআমি আর কোন দিন এক বেলা না খেয়ে ছিলাম নাজীবন আর জীবিকার তাগিদে সংগ্রাম করেছিআজ নির্দিষ্ট একটা অবস্থানে আছিকারো মুখাপেক্ষী হতে হয় নাবৌ বাচ্চা আর বৃদ্ধ মাকে নিয়ে আল্লাহ আমাকে অনেক ভালো রেখেছেনআমার মত এ রকম যারা আছে আমি তাদেরকে উসাহ দিয়ে থাকিশ্রম দিলে শ্রমের মূল্য পাওয়া যায়এটা কোন কঠিন বিষয় নয়যেহেতু আমরা অশিতিআমাদেরকে শ্রম দিয়ে জীবন বাঁচাতে হবে
 
যদি হোরনের মত অন্য শ্রমজীবী মানুষ  সময়ের মূল্য দিয়ে থাকে তাহলে মনে হয় আর কারো দারিদ্রের শিকার হতে হবেনা

 

এক নজরে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল
  
 
উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী একটি কৃষি প্রধান অঞ্চলএই জেলার প্রায় এক লক্ষ  মানুষ চাটাই শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে যার আধিকাংশই নারীশিল্প কারখানার দিক দিয়ে নোয়াখালী একটি  পশ্চাদপদ জেলা শিক্ষাদীক্ষায়ও  গ্রামীণ নারীরা অনেক পিছিয়েদৈনন্দিন ঘর কন্যার কাজ ছাড়া  এদের করণীয় কিছুই থাকেনাতবে সারাদিনের কাজের  ফাঁকে ফাঁকে এরা নিত্যপ্রযোজনীয় নানান জিনিষ তৈরী করে থাকেচাটাই তার মধ্যে  অন্যতমসম্পূর্ন হাতে তৈরী এ পন্যটি ধীরে ধীরে গ্রামীণ শিল্প হিসাবে প্রসার লাভ করেছেগ্রামীণ নারীরাই এর প্রধান কারিগর
 
গ্রামীণ শিল্প হিসাবে এর প্রসার ঘটলেও এর জন্য কোনো পরিকল্পিত বাজারব্যবস্থা গড়ে ওঠেনিযুগযুগ ধরে এ   শিল্পের সাথে জড়িত থেকেও নারীরা তাদের আর্থিক অবস্থা পরিবর্তন করতে পারেনি
 
আর্থিক অস্বচ্ছলতা,সামাজিক দৈন্যতা,নারীদের প্রতি সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যাদির কারণে এখানে  নারী শিক্ষার প্রসার ঘটেনিতাই এলাকার নারীদের শিক্ষার হারও খুব কম
 
গবেষণা এলাকায় বিভিন্ন এনজিও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেএনজিওদের ঋণ কার্যক্রম  মূলত তাদের সূদ ব্যবসার প্রসার ঘটেছে
 
অনেক নারীই এই ঋণের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে আছেনারীরা তাদের নামে ঋণ নিয়ে স্বামী শ্বশুর  ভাই কিংবা ছেলের হাতে তুলে দেয়এই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এর ঘানি টানতে হয়   নারীদেরকেই
এই ঋণে এরা জর্জরিত হয়ে থাকলেও ঋণ এবং অনুদান সর্বদা এদের আচ্ছন্ন করে রেখেছেযে    কানো আর্থিক টানাপোড়নে এরা ঋণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে
 
নারীদের আয়ের পুরো অংশই স্বামী অথবা পরিবারের জন্য খরচ করা হয়চাটাই বিক্রির টাক নারীরা  স্বামীর হাতে তুলে  দেয়চাটাই বিক্রির সামান্য যে টাকাটি পায় তাও তারা নিজেরমত করে খরচ করতে পারে না
 
এলাকার মানুষদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুন ৯৫%পরিবার একেবারেই নিম্ন আয়ের  এখানকার পুরুষদের মূল পেশা কৃষি ঘনবসতি পূর্ণ এই এলাকার অধিকাংশ মানুষের  নিজেদের কৃষি জমি নেইঅন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করেই এদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়
 
এলাকার নারীরা এক সীমাবদ্ধ জীবন যাপন করে যাচ্ছেএদের জীবন ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যে একই চক্রে  আবদ্ধ হয়ে আছেএলাকার সামাজিক কোনো কাজে নারীদের কোনো প্রকারের অংশ গ্রহন নেই
 
এই নারীরা বিশ্বাস করে, পুরুষরাই শ্রেষ্ঠ,নারীদের উপর কতৃত্ব করার অধিকার রয়েছে  পুরুষদের  নারীদের সৃষ্টি হয়েছে  পুরুষদের সেবাদাসী হিসাবে
 
হাজার কষ্টের মধ্যে থেকেও এরা অসম্ভব পরিশ্রমী ও কাজের প্রতি খুবই নিষ্ঠাবান
শহুরে জীবনের নানান সুবিধা বঞ্চিত শ্রমজীবী এ গ্রামীণ নারীরা গ্রামবংলার একটি অতি নগন্য কৃষি পন্য দিয়ে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে অবদান রাখছে অথচ এরা চিরকাল অবহেলিত অবস্থায় লোকচুর অন্তরালে রয়ে গেছে
 
যে পাতা দিয়ে চাটাই তৈরি করা হয় স্থানীয় ভাবে এটি হোগলা পাতা হিসাবে পরিচিতহোগলা গাছ সাধারনতঃ ১২ থেকে ১৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকেকাঁচা অবস্থায় এর রং থাকে গাড় সবুজশুকানো অবস্থায় এর রং হয়ে উঠে গাড় সোনালীপ্রায় এক ইঞ্চি ব্যসার্ধ্যের ত্রিকোনাকৃতির মাংসল পাতা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য
 
অন্যান্য পন্যের চেয়ে অনেক সস্তায় সহজে পাওয়া যায় বিধায় নিম্নবিত্ত ও সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ এই চাটাই ব্যপক হারে ব্যবহার করে
 
এ পাতা দিয়ে চাটাই ছাড়াও ঘর তৈরিরq বেড়া, টুকরী,পাখা, ছোট বাক্স,শিকা,দড়ি,ঘর সাজাবার সৌখিন দ্রব্যাদি, উন্নতমানের হস্ত শিল্প তৈরী করা যায়
 
কোনো প্রকারের কৃত্রিম আঁশ এর সাথে মিশানো হয়নাএটি ১০০% পরিবেশ সম্মত
 
হোগলা গাছ প্রাকৃতিক ভাবে নীচু জলজ সা্যঁতস্যাঁতে মাটিতে আপনাতেই জন্ম নেয়একবার  জন্মালে এটি সহজে মরেনাগোড়া থেকে কেটে নিলে সেখান থেকে এটি আপনাতেই আবার গজিয়ে উঠে  
 
এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারী বেসরকারী কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তবে দুএকটি  বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি উচ্চমানের হস্তশিল্প                          
    
তৈরী করে বিদেশের বাজারে রফতানী করার চেষ্টা করছে
 
চরম দারিদ্রতার মধ্যে জীবন যাপন করলেও এদের মধ্যে রয়েছে এক বিশেষ স্বাতন্ত্র বোধগ্রামীণ নারী হয়েও এরা মনে করে সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে একদিন এরা অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করতে পারবে
 
কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় এদের মধ্যে আছে এক অমিত সম্ভাবনাযেকোনো কাজই এরা খুব আগ্রহ সহকারে করে থাকে
 
নোয়াখালীর কয়েকটি গ্রামীণ বাজার চাটাইয়ের জন্য বিখ্যাতএ এলাকাq থেকে মাসে  কোটি টাকার চাটাই দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়
 
এলাকার প্রতিটি গ্রামেই হোগলা পাতার বন রয়েছে কোনো জমিতে একবার হোগলা গাছ জন্মালে  তা বহু বসর পর্যন্ত টিকে থাকে মাটি থেকে শিকড় সহ মূল উপাটন না করলে এর বংশ বিস্তার হতে থাকে
 
হোগলা পাতা দিয়ে উপাদিত পন্য প্রধানতঃ আভ্যন্তরিন বাজারে সরবরাহ করা হয়
 
এখান থেকে ব্যবসায়ীরা সিলেট,ঢাকা , চট্টগ্রামরংপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে    সরবরাহ করে
 
স্থানীয় ফড়িয়ারাই  মূলত চাটাইয়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেনারীদের কাছ থেকে কম  দামে কিনে এরা অধিক মুনাফায় দেশের বিভিন্ন যায়গায় বিক্রি করে

গবেষণার  আলোকে সুপারিশ

হোগলা পাতার এ শিল্পটির রয়েছে এক উজ্বল সম্ভাবনাএ থেকে পরিবেশ সম্মত পন্য উপাদন হয়  বিধায় দেশ বিদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছেসিলেটের পাহাড়ী জনগোষ্ঠির মধ্যে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছেসীমান্তের অপর পাড়ে পাহাড়িদের মাধ্যমে এই চাটাই ব্যাপক হারে পাচার হয়কুটির শিল্প হিসাবে এর প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে তবে প্রচারের অভাবে এটি তেমন বিকাশ লাভ করেনিঅংশগ্রহণমূলক কর্মগবেষণায় যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে তা হলো এটিকে ঠিক গতানুগতিক গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর একটি সুদূর প্রসারী কর্মসুচী নেয়া প্রয়োজনমাত্র ৬ মাসের গবেষণায় একদিকে যেমন ছিলো চাটাই শিল্পে জড়িত দরিদ্র নারীদের সামাজিক পরিবর্তনের ভাবনা, তেমনি এই  সম্ভাবনাময় উপেতি  গ্রামীণ শিল্পের প্রসারের ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া গেছে অমিত সম্ভাবনার দ্বারযার অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে অসীম
    
 এর জন্য প্রয়োজন :

 

# নারীদের মধ্যে কুটির শিল্প প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হোগলা পাতা দিয়ে শুধু চাটাই তৈরী করেই নারীরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, হোগলা পাতা দিয়ে শুধু চাটাইই নয়, নানান আকর্ষনীয় সৌখিন পন্য উত্পাদন করা যায় দেশে বিদেশে যার অনেক বাজার মূল্য রয়েছেযার দ্বারা গ্রামীণ নারীরা যথেষ্ট লাভবান হতে পারবে

# ফড়িয়াদের মাধ্যমে উত্পাদিত পন্য বিক্রি না করে নিজেরাই নিজেদের পন্য সুবিধামত বিক্রি করার  ব্যবস্থা করা, এর জন্য নিজেদের পুঁজি সৃষ্টি প্রয়োজনএই নারীদেরকে সচেতনতা মূলক প্রশিক্ষণ কিংবা আরো অংশগ্রহণমূলক কর্ম গবেষণার প্রয়োজন, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের সমস্যা নিজরা চিহ্নিত করতে পারবে এবং নিজেরাই তা সমাধন করতে সচেষ্ট হবে

# চাটাই ছাড়াও ঢাকা ও বিদেশের বাজার সৃষ্টির জন্য নতুন নতুন পন্য তৈরী করার কৌশল সম্মন্ধে  সার্বক্ষণিক ফলোআপ করাপরিবেশ পরিস্থিতির পরিবর্তনের সাথে সাথে গ্রাহকদেরও রুচির পরিবর্তন ঘটেবাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে মানুষের রুচি অনুযায়ী পন্য উপাদন করা প্রয়োজনএর জন্য পর্যবেণ সেল থাকা প্রয়োজন , অন্ততঃ যত দিন সম্ভব

# নারীরা যেন নিজেরাই নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে এমন সংগঠন তৈরী করার  ক্ষেত্র সৃষ্টি করে দেয়াযার মাধ্যমে তারা নিজেরাই আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে

# নারীদের উত্পাদিত পন্য যেন নারীরা নিজেই নিজেদের আওতায় রাখতে পারে তার জন্য নিজেদের নিয়ন্ত্রিত সেল সেন্টারের ব্যবস্থা করা

# এলাকার শিশুদের প্রায় ক্ষেত্রে গতানুগতিক স্কুলের প্রতি রয়েছে ব্যাপক অনিহা৩ থেকে ৫ বত্সরের  শিশুদের জন্য আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষামুলক স্কুলের ব্যবস্থা করা যেতে পারেপরবর্তী জীবনে যেন এরা স্বয়ংকৃয়ভাবে স্কুল মুখী ও শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে

 

 

 

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

পুরাতন হাসপাতাল সড়ক
মাইজদী কোর্ট, নোয়াখালী
ফোন-০৩২১-৬১৪৭
মোবাইল-০১৭১১২২৩৩৯৯
e
-mail:-mhfoez@gmail.com

 

 

 

 

Mahmudul Huq Foez
 
আপনজন
 
ভালোবাসার একটি গোলাপ
সাতরাজারই ধন,
কোথায় খুঁজিস ওরে ক্ষেপা
এইতো আপন জন।
নীরবতা
 
নীরবে কেটেছে দিবস আমার
নীরবে কেটেছে রাত,
নীরবে হেনেছে হৃদয় আমার
প্রণয়ের অভিসম্পাত।
রঙ
 
রঙ দেখেছো রঙ ?
শাওন রাতের
নিকষ কালো
অন্ধকারের রঙ !
রঙ দেখেছো রঙ !
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
 
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী একটি দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। নোয়াখালী সদরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই চর এলাকা। এখানে বাস করে সাধারন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তাছাড়াও দিনমজুর, রিক্সাশ্রমিক, জেলে প্রভৃতি পেশার মানুষ এখানে বাস করে। খুব কমসংখ্যক নারি কৃষি সহ বিভিন্ন কাজ করলেও তারা মূলত ঘরকন্যার কাজ করে থাকে। ঘর কেন্দ্রিক নানান কাজের সঙ্গেও এরা জড়িত। এইসব নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে শিক্ষার হার খুব কম। জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতাও এদের তেমন নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এরা বেশীরভাগ সময়ে সনাতন জ্ঞান, নিজস্ব ধারনা এবং আকাশের হাবভাব দেখে বুঝতে চেষ্টা করে। প্রায় ক্ষেত্রে এরা নিয়তির উপর নিজেদেরকে সমর্পন করে থাকে। তবে গত কয়েক বছরের বড় ধরনের ঝড় জলোচ্ছাস ও সাম্প্রতিক সিডরের কারনে এদের ভিতর কিছুটা সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এদের অধিকাংশের বাড়িতে রেডিও কিংবা টেলিভিশন নেই। তবে তারা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে রেডিও টেলিভিশন থেকে খবরাখবর পেয়ে থাকে।
গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে অনেক গুলো বড় বড় ঝড় জলোচ্ছাস গর্কী সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে গিয়েছিলো। সে দুর্যোগ গুলোতে প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ‘৫৮.’৬০, ও ‘৭০ এর জলোচ্ছাস এ অঞ্চলে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো। সে সময় এখানকার মানুষ কোনো মাধ্যম থেকে কেনো সংবাদই পেতোনা। সে সময়ের সরকার গুলোও ছিলো এব্যপারে একেবারেই উদাসীন।
নোয়াখালী সদরের সর্বদক্ষিনে হাতিয়া ষ্টিমার ঘাট ও অতিসম্প্রতি বয়ার চরের সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলে ফেরী চলাচলের জন্য চেয়ারম্যান ঘাট নামক স্থানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌপরিবহন সংস্থার একটি পল্টুন স্থাপিত হয়েছে । এখানে হাতিয়া দ্বীপ ও নোয়াখালীর মূল ভূখন্ডের মধ্যে ফেরি যোগাযোগ রয়েছে । এ এলাকায় মেঘনার মোহনায় প্রচুর সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার ও ছোটছোট জেলে নৌকা এসে ভীড়ে থাকে । এই ফেরীঘাটের সুবাদে এখানে একটি জমজমাট বাজার গড়ে উঠেছে। এখানের অনেক জেলে জানিয়েছেন, তাদের অনেকেরই নিজস্ব কোনো রেডিও নেই। যারা চরের কাছাকাছি থেকে সাধারনত: মাছ ধরে থাকে। ছোট নৌকা নিয়ে তারা কখনো গভীর সমুদ্রে যায় না। কখনো কোনো দুর্যোগ দেখলে নদীর হাবভাব বুঝে সাবধানতা অবলম্বন করে। সারাদিন মাছ ধরা শেষে রাতে তারা চেয়ারম্যান ঘাটে কিংবা হাতিয়া ষ্টিমার ঘাটে আসলে লোকমুখে বিভিন্ন সংবাদ পেয়ে থাকে। নদীর কূলের এ বাজার গুলোতে এখন রেডিও তেমন শুনা হয়না। চা দোকান গুলোতে টেলিভিশন আছে । তাই সেখানে কাষ্টমারের ভীড় লেগে থাকে। যে দোকানে টেলিভিশন নেই সে দোকানে লোকজন তেমন যায় না। এসব দোকান গুলোতে বেশীর ভাগ সময় নাটক ও সিনেমা বেশী দেখা হয়। তবে দুর্যোগকালীন সময় সংবাদ বেশী দেখা হয়। এলাকার মানুষদের বদ্ধমূল ধারনা জন্মেছে যে, রেডিও টেলিভিশনে জাতীয় সংবাদ ছাড়া স্থানীয় সংবাদ প্রচারিত হয়না। তাই তারা খুব প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্থানীয় সংবাদ গুলো লোকমারফত পেয়ে থাকে। তবে তা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয়না। দুর্গম অঞ্চলের অনেক মানুষ জানিয়েছেন গত সিডরের সময় তারা লোকমুখে সংবাদ পেয়েছিলেন। সাগরের অবস্থা দেখে তারা সাগর থেকে ডাঙ্গায় চলে এসেছেন, তবে অনেকে উপরে সাগরের কাছাকাছি নিজেদের ঘরেই ছিলেন। অনেকেই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।
জরিপের বিশ্লেষন: কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content) সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ কার্য চালানোর সময় জানা গেছে, এরকম একটি সম্প্রচার কেন্দ্র সন্মন্ধে অনেকেরই ধারনা খুবই অস্পস্ট। এব্যপারে অনেকের কোনো রকম কোনো ধারনাই নেই। তবে বিষয়টি বুঝার পরে সবার মধ্যেই প্রচুর আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তারা সকলেই মত দেন যে এরকম একটি কেন্দ্র এলাকায় খুবই প্রয়োজন।
নোয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলের কয়েকটি এলাকায় মোট ২০জনের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। এখানে মাত্র দুজনের রেডিও এবং মাত্র এক জনের নিজস্ব একটি ছোট্ট টেলিভিশন ও রেডিও রয়েছে। তাদের অবশ্য খবর তেমন শুনা হয়না। রেডিওতে গান এবং টেলিভিশনে নাটক দেখা ও গানশুনা বেশী হয়। নারিদের শুধু নাটক ও গানই শোনা হয়। তবে পুরুষরা মাঝে মাঝে খবর শুনে থাকে। নারিদের মধ্যে খবর শুনার আগ্রহ খুব কম। গত সিডরের সময় পুরুষরা ১০০ শতাংশই রেডিও কিংবা টেলিভিশনে খবর পেয়েছেন কিন্তু ১০০ শতাংশ নারি বলেছেন তারা তাদের স্বামী কিংবা লোকমারফত খবর পেয়েছেন। ৮০শতাংশ বলেছেন তারা ঝড়ের পূর্বাভাষ পেয়ে নিজেদের জায়গায়ই অবস্থান করেন। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলেন বাড়ির নিরাপত্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। যেমন সেখানে কোথাও পানি বা বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের খুবই অসুবিধা পড়তে হয়। তাই অনেকেই সেখানে যেতে তেমন আগ্রহী হয়না। নিয়তির উপরও তারা অনেকাংশে নির্ভরশীল। ১০০ শতাংশ বলেছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়কালে তাঁরা আবহাওয়ার সংবাদ শুনতে চান। ১০০ শতাংশ বলেছেন তাদের অনুষ্ঠান দেখতে সবচেয়ে বেশী আগ্রহ নাটকের প্রতি । তবে বাংলা সিনেমার প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন, কমিউনিটি রেডিও স্থাপিত হলে শিক্ষার উপর সবচেয়ে বেশী অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেয়া উচিত। অন্য ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন শাসন না করলে শিশুদের পড়াশুনা হয়না। তবে তারা এও জানিয়েছেন এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়। এ বিষয়ে শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠান প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা তারা জানিয়েছেন। ১০০ শতাংশ জানিয়েছেন বয়ো:সন্ধিকালীন সময়ে মেয়েদের সমস্যা বিষয়ক সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান বিশেষ ভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে। সবাই মনে করেন এ ব্যপারে মেয়েরা এমন কি অভিভাবকরাও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নন। এ নিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক দ্বিধা কাজ করে। অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন। এথেকে মেয়েরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিষয়ে ১০০শতাংশ জানিয়েছেন মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, সাধারন রোগবালাই, ডায়রিয়া, খাদ্যে পুষ্টিমান, টিকা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা মুলক অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। তবে মাত্র এক জন এইড্‌স বিষয়ে অনুষ্ঠান করার কথা জানিয়েছেন। বাসস্থান বিষয়ে ৭৫শতাংশ জানিয়েছেন, ভূমি ও ভূমির অধিকার বিষয়ে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। অবশ্য এ ব্যপারে পুরুষরাই বেশী আগ্রহী। নোয়াখালীতে তাঁত শিল্পের তেমন কোনো প্রসার নেই। এবিষয়ে কারো তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে ১০০শতাংশই হস্তশিল্প ও নারিদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করার কথা বলেছেন। একজন মন্তব্য করেন এক সময় নোয়াখালীতে প্রচুর তাঁতের প্রসার ছিলো । কিন্তু কালের গর্ভে তা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানে স্থানে যুগীপাড়া ছিলো। সেখানে লুঙ্গি গামছা শাড়ি এসব স্থানীয় ভাবে তৈরী হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও এগুলো বাইরের জেলা গুলোতে চালান হতো। কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে পারলে সেগুলো হয়তো আবার চালু হবে। আশা করা যায় এ থেকে তখন হয়তো এ এলাকার অনেক উন্নতি সাধিত হবে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন কৃষিঋণ, সার, বীজ, উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ, হাঁস মুরগি পালন, কীটনাশক ছাড়া সব্জী চাষ, খাদ্যে পুষ্টিমান ইত্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যম হওয়া উচিত নাটক, কথিকা, জীবন্তিকা ইত্যাদির মাধ্যমে। এরা আরো জানিয়েছেন স্থানীয় ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে সবার কাছে তা গ্রহনযোগ্য হবে। এছাড়াও স্থানীয় ভাষায় নাটক, গান এবং স্থানীয় সমস্যা ও সমাধান ইত্যাদি বেশী বেশী প্রচার হওয়া দরকার বলে সবাই জানিয়েছেন।
উপসংহার:- সার্বিক জরিপে দেখা যায় এ এলাকার জন্য কমিউনিটি রেডিওর অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দুর্গম এ অঞ্চলের মানুষ কাছের খবরটিও সঠিক ভাবে পায়না। কথায় কথায এলাকাবাসী জানায়, ‘‍ইরােক েবামায় মানুষ মরার খবর আমরা সাথে সাথে রেডিও টেলিভিশনে পাই কিন্তু পাশের গ্রামে মড়ক লেগে হাঁসমুরগী মারা গেলে আমরা তার খবর পাইনা‍ অথচ এটি আমাদের জন্য অধিকতর জরুরী’। এখানে এটি স্থাপিত হলে শুধু দুর্যোগকালীন সময়েই নয়, এ কেন্দ্র গ্রামীণ জনগণের সার্বক্ষনিক দিনযাপনের অনুসঙ্গ হয়ে থাকেব। স্থানীয় ভাষায় স্থানীয় আঙ্গিকে স্থানীয় সমস্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে এটি জনগনের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করবে এবং অধিক গ্রহনযোগ্যতা পাবে। এলাকায় সচেতনতা বাড়বে। উপকৃত হবে প্রান্তিক মানুষ।

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
মোবাইল: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@gmail.com

Mail to : massline@bangla.net
masslinemediacenter@yahoo.com



 
সকল সত্ব সংরক্ষিত সকল সত্ব সংরক্ষিত সকল সত্ব সংরক্ষিত This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free