শীত বিকেলের কবিতা
মাহ্মুদুল হক ফয়েজ
আমার একটি কবিতা পড়বো বলে দাঁড়িয়েছি এখনে
চমত্কার বিকেল, ঝাউ গাছ ছোঁয়া বাতাস
দীঘির নীল জলে পাতি হাঁস
বটের পাতা ছুঁয়ে শান্ত স্নিগ্ধ দুটি শালিক,
এই একদল ঊত্সুক কবিদের সাথে
এরা সবাই আগ্রহে অপোয় আছে বহুক্ষণ।
অফিস ফেরত একজন প্রবীন কেরাণী
জর্জকোর্টের সিঁড়ি ভেঙ্গে ঘুষের টাকা গুনতে গুনতে
বিরক্ত দৃষ্টি মেলে ফিরে তাকালো একবার।
'শালারা কবি হয়েছে,বাবার হোটেল ধ্বংস করে
মেতেছে নষ্টামিতে '; একজন উঠতি ঠিকাদার
ভগবানের দোকানে যাবার আগে আগাম নেশায়
আড়চোখে দেখে নিলো উত্সুক কবিদের।
বন্ধু ইয়ার, শীত বিকেলের কবিতায় কি কাজ
ফালতু সময় নষ্ট করে বসে থাকা ঝাউ বীথিকার তলে।
প্রেস ক্লাবে জুয়া এবং হাউজির আড্ডা খানায়
যেতে যেতে একজন রিক্সা শ্রমিকের লোলুপ চোখ
চেখে নিলো কবিতায় সাজানো এক কিশোরী কবিকে।
রিক্সায় পা তুলে বুক নিশানা করে একই পথে
প্রেস কাবে ছুটে গেলো একজন আড়ষ্ট সাংবাদিক।
নষ্ট কবিদের কবিতায় লেপ্টে থাকে নষ্ট গন্ধ
কবিতায় কোনো সংবাদ নেই,বৃথা যাবে কালি ও কলম।
এই নষ্টামির পৃথিবীতে কবিতার কি কাজ !
পকেটে অর্থ চাই, চাই সাফারিতে সুগন্ধি সুবাস।
লোমশ বগলে পাউডার মেখে মেখে
শিল্পকলা একোডেমীর দরজা আগলে রাখা।
কোর্ট বিল্ডিংএর সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় দালাল টাউট,
ঠোঁটে সিগারেট সুগন্ধি ধোঁয়া, চোখে প্রসস্তি।
আজ সবচেয়ে দাগী খুনী ও গমের চোরাকারবারির
কোর্ট থেকে জামিন হ’বে,বারান্দায় গড়ায়
ভাজা বাদামের খোসা।
আমার একটি কবিতা পড়বো বলে দাঁড়িয়েছি-
বন্ধু ইয়ার, কেমন হয় যদি আমরা সবাই
কবিতা টবিতা সব ছেড়ে ছুঁড়ে
এই বিজয় মঞ্চে জুয়া এবং হাউজির আসর জমাই।
ভিক্টোরি-ডে নাম্বার সিক্সটিন
একুশে ফেব্রুয়ারী নাম্বার টুয়েন্টি ওয়ান
উল্টা পাল্টা সিক্সটিনাইন...
বন্ধু ইয়ার এসো এক সাথে সাউটিং করি
ঠিক ঠিক নাম্বারে মিলে গেছে লাইন
ই-য়ে-স্ ...
লাইন কমপ্লিট,ফাস্ট রাউন্ড ওভার-
নাউ রেডি ফর নেক্সট রাউন্ড।
অতঃপর ক্লান্ত শ্রান্ত কবিতার অক্ষর গুলো
দীঘির জলের মাছ, বট মেহগনির পাতা,
ঘাস ফড়ঙিরে ডানা, শহীদ মিনারের ধূলো-
সব কিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে অবিরাম জন্ম দিচ্ছে
একটি সুন্দর নিষ্কলংক নির্মল কবিতার ॥
|