রৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টি রৌদ্রবৃষ্টি রৌদ্রবৃষ্টি রোদ্রবৃষ্টি
   
 
  নোয়াখালীর অরক্ষিত উপকূল : প্রয়োজন সবুজ বেষ

 নোয়াখালীর অরক্ষিত উপকূল : প্রয়োজন সবুজ বেষ্টনী 

 

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ


অরক্ষিত অবস্থায় নোয়াখালীর দক্ষিন উপকূলের লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস করছে এক চরম আতঙ্কের মধ্যে। সিডরের মত কোনো জলোচ্ছাস এ এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গেলে কি বিপর্যয় নেমে আসবে তা আগে ভাগে কিছুটা ধারনা করা যায়। ভয়াবহ সিডরকে বুক দিয়ে অনেকটা ঠেকিয়ে দিয়েছিলো সুন্দরবন। এই বনাঞ্চল না থাকলে সিডরে যে প্রাণহানী ঘটেছিলো তারো চেয়ে অনেকগুণ প্রাণহানী যে ঘটতো সে ব্যপারে সকলেই এখন প্রায় নিশ্চিত।

১৯৫৮ ও ’৬০ সনে নোয়াখালীর উপকূলে পর পর দুটি বড় ধরনের জলোচ্ছাস আঘাত হানে। এর ফলে উপকূলীয় অনেক মানুষের প্রাণহানী ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। এ এলাকাটি ভৌগোলিক অবস্থানের কারনে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে যায়। গত এক শত বছর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ সময় শক্তিধর বেশ কয়টি সাইক্লোন এই এলাকার উপর বয়ে যায়। সেগুলো তখন জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে তখন নোয়াখালীর সমগ্র উপকূল জুড়ে একটি প্রাকৃতিক সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলার এক মহাপরিকল্পনা গ্রহন করা হয়। নোয়াখালী বন বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ‘উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী’ নামে এই কাজটি শুরু হয় ১৯৬৭-৬৮ সন থেকে। সেই থেকে ২০০০ সন পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ৪৫ হাজার একর জমিতে ম্যনগ্রোভ বন সৃজন করা হয়। এর মূল লক্ষ্য ছিলো সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছাস থেকে উপকূলের মানুষদের জানমাল রক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণ। এর ফলে উপকূল জুড়ে শুধু সবুজ বেষ্টনিই সৃষ্টি হয়নি, উপকূলীয় এ জেলায় পর্যটনেরও এক অসীম সম্ভাবনা দেখা দেয়। সাগরের লোনা জল ছোঁয়া দিগন্ত বি¯তৃত সবুজ বন যে কোনো মানুষের হৃদয় মোহিত করে দিতো। সেই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করতে সে এলাকায় প্রায় দর্শণার্থীর ভিড় লেগে থাকতো। সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের। ধারনা করা হয় এই বনটি হয়ে উঠেছিলো এশিয়ার বৃহত্তম মানব সৃষ্ট ম্যনগ্রোভ বন হিসাবে। কিন্তু মাত্র দু’চার বছরের মধ্যেই গুটি কয়েক মানুষের লোভাতুর দৃষ্টি, সীমাহীন ভূমিগ্রাসীতা, দুর্নীতি ও বনদস্যুতার জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় নোয়াখালী উকূলীয় এই দৃষ্টিনন্দন সবুজবেষ্টনিটি। সে সময়ের প্রশাসনও এই ধ্বংসযজ্ঞকে নীরবে যেন সায় দিয়ে গিয়েছিলো।

নোয়াখালীর নতুন জেগে ওঠা চরে বনায়নের কাজ শুরু করতে প্রথমে চর জব্বার ও হাতিয়াকে এ কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। ১৯৭০ সনের ১২ নভেম্বর ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দূর্যোগে উপকূলে পাঁচ লাখ মতান্তরে দশ লাখ মানুষ নিহত হলে এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি অনুভূত হয়। স্বাধীনতার পরে ব্যাপক আকারে বনায়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। ১৯৭৬ সনে বন বিভাগের সঙ্গে সরকার এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিতে বলা হয় দশ বছর পর জমি পোক্ত হলে তা আবার সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ে ফেরত দেবে এবং তা ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক নম্বর খাস খতিয়ানে চলে আসবে। ১৯৮৮ সনে আর এক ঘোষণায় তা দশ বছর থেকে বাড়িয়ে বিশ বছর করা হয়। কাজ শুরু করার সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বন বিভাগকে ৪ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর ভূমি হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। কাগজে কলমে এত বিপুল পরিমাণ জমি দেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। কারণ এই বিপুল জমির অধিকাংশই এখনো সাগর থেকে জেগে ওঠেনি।

অপরদিকে নোয়াখালী জেলা ভূমি রাজস্ব বিভাগ বলছে, ২ লক্ষ ১১ হাজার একর সদ্য জেগে উঠা ভূমি বনবিভাগের কাছে বনায়নের জন্য হস্তান্তর করা হয়। যার মধ্যে ডুবা চর ও ভেঙ্গে যাওয়া চরে  প্রায় ৯৭ হাজার একর ভূমি বনায়ন করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে শুধু ১ লক্ষ ১৪ হাজার একর ভুমিতে বন সৃজন করা হয়েছে। এ অবস্থায় বন বিভাগে জমি প্রদান এবং প্রশাসনের কাছে পুনরায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছুটা মতভেদ দেখা দেয়। উপকূলীয় এ বন ধ্বংসের জন্য একে অপরকে দোষারোপও করতে থাকে।

নোয়াখালীর দক্ষিণে সুধারাম ও লক্ষ্মীপুরের রামগতি সীমানা ধরে দক্ষিণ প্রান্তে সত্তরের দশক থেকে জেগে উঠেছে বিশাল চর, যা পরবর্তীতে বয়ার চর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। বন বিভাগ এ চরে ব্যাপক বনায়ন করে। কিন্তু পরবর্তীতে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এই বনাঞ্চল। এক সময় পুরো বন সন্ত্রাসীরা দখল করে নেয়, উচ্ছেদ হয়ে যায় বন বিভাগ। এ সময় যথেচ্ছ ভাবে বন ধ্বংস হতে থাকে।

‘৯০ এর দশক থেকে পর্যায়ক্রমে নোয়াখালীর বনাঞ্চল গুলোতে নানান সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের আস্তানা গাঁড়তে শুরু করে। তাদের মধ্যে রয়েছে বাশার মাঝি, নব্যা চোরা, সফি বাতাইন্যা, সোলায়মান কমান্ডার, জাহাঙ্গীর মাঝি প্রমুখ সন্ত্রাসীরা। তখন ব্যাপক জনশ্র“তি ছিলো এই সব সন্ত্রাসীদের লালন পালন করে আসছিলো কিছু রাজনৈতিক নেতা, ভূমিগ্রাসী জোতদার এবং কিছু চিহ্নিত শিল্পপতিরা। তারা এই সব সন্ত্রাসীদের কাজে লাগিয়ে নিজেরা বিপুল পরিমান সরকারী খাসজমি দখল করে নেয়। কেউ কেউ সরাসরি এ বন ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত ছিলো। সেই সব জমিতে আনেকেই গড়ে তুলেন বিশাল বিশাল মৎস্য খামার। অভিযোগ রয়েছে এই ভূমিগ্রাসীরা অনেক নিরিহ ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে নতুন নতুন চর দখল করে নেয়। চর মজিদ ষ্টিমার ঘাটের পাশে ছিলো বন বিভাগ সৃজিত মনোরম বন এলাকা। নোয়াখালীর একটি শিল্প গোষ্ঠি সে সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে সেই বন উজাড় করে একটি বিশাল মৎস্য খামার গড়ে তোলে। তখন প্রশাসন বন কাটা থেকে বারবার বিরত থাকতে বলা হলেও তারা কাউকে তোয়াক্কা করেনি। অনেকে মনে করেন প্রশাসনের সেই কার্যক্রম ছিলো লোক দেখানো। প্রশাসন ইচ্ছে করলে তখন সহজেই তা ঠেকাতে পারতো। এরকম আরো কিছু এলাকায় কতিপয় প্রভাবশালী মহল চরাঞ্চলের জমিগুলো অবৈধ ভাবে  দখল করে মৎস্য ও চিংড়ি খামার গড়ে তুলেছে। এখনো এদের আগ্রাসন থেমে থাকেনি। অন্যদিকে কথিত ভূমি দস্যুরা বন উজাড় করে এক একজন ভূমিহীনের কাছে দুই আড়াই একর করে জমি মেপে মেপে বিক্রি করতে থাকে। শহরের কিছু আবস্থাপন্ন মানুষও এ সুযোগে বেশ কিছু জমি দখল করে নেয়। চরাঞ্চলে নেমে আসে এক অরাজক পরিস্থিতি।

বনদস্যু ও জোতদারদের হাতে উপকূলীয় চরাঞ্চলের প্রায় ৭০ হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ার পরে বয়ার চর, নাঙ্গলীয়া, নলের চর, কেরিং চর ও আশেপাশের চর নিয়ে হাতিয়া উপজেলার হরণী ও চানন্দী ইউনিয়ন ঘোষিত হয়। এক সময় বঙ্গপসাগর বেষ্টিত হাতিয়া উপজেলার এই দুটি ইউনিয়ন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে তা আবার পয়স্তি হয়ে নোয়াখালী সদরের সাথে সংযুক্ত হয়। লোকমুখে তা বয়ার চর হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। সে বয়ার চরই এখন হাতিয়ার অংশ। এই বয়ার চরকে নিয়ে সরকারী উদ্যোগে চর উন্নয়ন সংস্থা (সি ডি এস পি) ভূমিহীনদের বসতি স্থাপন প্রকল্প গ্রহন করে। বন বিভাগের হিসাব মতে সাগর মোহনায় এই বয়ার চরে ১৩ হাজার ৭০০ একর জমির বন ধ্বংস হয়ে যায়। এখন এখানে ১২ হাজার পরিবারের ৬০ হাজারের অধিক মানুষ বসবাস করছে। সাগর সঙ্গমের এই চর গুলোতে অরক্ষিত অবস্থায় বাস করছে হাজার হাজার ভূমিহীন পরিবার। সব মিলিয়ে দুই লক্ষাধিক মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছে। এ এলাকা গুলোতে এখনো কোনো সরকারী সুযোগ সুবিধা পৌঁছায়নি। সাগরের কোল ঘেঁসা এ এলাকা প্রতিনিয়ত জলোচ্ছাসের আতঙ্ক বিরাজ  করে। এ অবস্থায় উপকূল জুড়ে সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলার আর কোনো বিকল্প নেই।

গত ২ মে মায়ানমারের উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রলয়ঙ্করি সামুদ্রিক ঝড় ‘নার্গিস’। এ ঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনা ছিলো প্রচুর। সব ঝড়ের গতি প্রকৃতি এক রকম নয়। ঝড়টি যদি সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতো তাহলে সিডরের পরপরেই আরেকটি দুর্যোগ নেমে আসতো এই দুর্ভাগা বাংলাদেশে। নোয়াখালীর অরক্ষিত উপকূলে এর চিত্র হতো আরো ভয়াবহ।

বিগত সময়ে বন ধ্বংসের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, শুধু উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনি গড়ে তুল্লেই এর কাজ শেষ হবেনা। একে রক্ষনাবেক্ষনের গুরু দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই। প্রয়োজন বোধে কোষ্টগার্ড ও বন নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োগ করে সুষ্ঠ ব্যাবস্থাপনা গ্রহন করা প্রয়োজন। নতুন করে বনায়ন করার সময় দেশী গাছের জাত নির্বাচন এবং পর্যটনের বিষয়টিও পরিকল্পনার মধ্যে থাকলে এ এলাকায় এক নব দিগন্তের সূচনা হবে বলে সকলের বিশ্বাস।

 

 

 


 
Mahmudul Huq Foez
 
আপনজন
 
ভালোবাসার একটি গোলাপ
সাতরাজারই ধন,
কোথায় খুঁজিস ওরে ক্ষেপা
এইতো আপন জন।
নীরবতা
 
নীরবে কেটেছে দিবস আমার
নীরবে কেটেছে রাত,
নীরবে হেনেছে হৃদয় আমার
প্রণয়ের অভিসম্পাত।
রঙ
 
রঙ দেখেছো রঙ ?
শাওন রাতের
নিকষ কালো
অন্ধকারের রঙ !
রঙ দেখেছো রঙ !
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
 
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী একটি দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। নোয়াখালী সদরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই চর এলাকা। এখানে বাস করে সাধারন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তাছাড়াও দিনমজুর, রিক্সাশ্রমিক, জেলে প্রভৃতি পেশার মানুষ এখানে বাস করে। খুব কমসংখ্যক নারি কৃষি সহ বিভিন্ন কাজ করলেও তারা মূলত ঘরকন্যার কাজ করে থাকে। ঘর কেন্দ্রিক নানান কাজের সঙ্গেও এরা জড়িত। এইসব নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে শিক্ষার হার খুব কম। জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতাও এদের তেমন নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এরা বেশীরভাগ সময়ে সনাতন জ্ঞান, নিজস্ব ধারনা এবং আকাশের হাবভাব দেখে বুঝতে চেষ্টা করে। প্রায় ক্ষেত্রে এরা নিয়তির উপর নিজেদেরকে সমর্পন করে থাকে। তবে গত কয়েক বছরের বড় ধরনের ঝড় জলোচ্ছাস ও সাম্প্রতিক সিডরের কারনে এদের ভিতর কিছুটা সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এদের অধিকাংশের বাড়িতে রেডিও কিংবা টেলিভিশন নেই। তবে তারা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে রেডিও টেলিভিশন থেকে খবরাখবর পেয়ে থাকে।
গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে অনেক গুলো বড় বড় ঝড় জলোচ্ছাস গর্কী সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে গিয়েছিলো। সে দুর্যোগ গুলোতে প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ‘৫৮.’৬০, ও ‘৭০ এর জলোচ্ছাস এ অঞ্চলে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো। সে সময় এখানকার মানুষ কোনো মাধ্যম থেকে কেনো সংবাদই পেতোনা। সে সময়ের সরকার গুলোও ছিলো এব্যপারে একেবারেই উদাসীন।
নোয়াখালী সদরের সর্বদক্ষিনে হাতিয়া ষ্টিমার ঘাট ও অতিসম্প্রতি বয়ার চরের সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলে ফেরী চলাচলের জন্য চেয়ারম্যান ঘাট নামক স্থানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌপরিবহন সংস্থার একটি পল্টুন স্থাপিত হয়েছে । এখানে হাতিয়া দ্বীপ ও নোয়াখালীর মূল ভূখন্ডের মধ্যে ফেরি যোগাযোগ রয়েছে । এ এলাকায় মেঘনার মোহনায় প্রচুর সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার ও ছোটছোট জেলে নৌকা এসে ভীড়ে থাকে । এই ফেরীঘাটের সুবাদে এখানে একটি জমজমাট বাজার গড়ে উঠেছে। এখানের অনেক জেলে জানিয়েছেন, তাদের অনেকেরই নিজস্ব কোনো রেডিও নেই। যারা চরের কাছাকাছি থেকে সাধারনত: মাছ ধরে থাকে। ছোট নৌকা নিয়ে তারা কখনো গভীর সমুদ্রে যায় না। কখনো কোনো দুর্যোগ দেখলে নদীর হাবভাব বুঝে সাবধানতা অবলম্বন করে। সারাদিন মাছ ধরা শেষে রাতে তারা চেয়ারম্যান ঘাটে কিংবা হাতিয়া ষ্টিমার ঘাটে আসলে লোকমুখে বিভিন্ন সংবাদ পেয়ে থাকে। নদীর কূলের এ বাজার গুলোতে এখন রেডিও তেমন শুনা হয়না। চা দোকান গুলোতে টেলিভিশন আছে । তাই সেখানে কাষ্টমারের ভীড় লেগে থাকে। যে দোকানে টেলিভিশন নেই সে দোকানে লোকজন তেমন যায় না। এসব দোকান গুলোতে বেশীর ভাগ সময় নাটক ও সিনেমা বেশী দেখা হয়। তবে দুর্যোগকালীন সময় সংবাদ বেশী দেখা হয়। এলাকার মানুষদের বদ্ধমূল ধারনা জন্মেছে যে, রেডিও টেলিভিশনে জাতীয় সংবাদ ছাড়া স্থানীয় সংবাদ প্রচারিত হয়না। তাই তারা খুব প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্থানীয় সংবাদ গুলো লোকমারফত পেয়ে থাকে। তবে তা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয়না। দুর্গম অঞ্চলের অনেক মানুষ জানিয়েছেন গত সিডরের সময় তারা লোকমুখে সংবাদ পেয়েছিলেন। সাগরের অবস্থা দেখে তারা সাগর থেকে ডাঙ্গায় চলে এসেছেন, তবে অনেকে উপরে সাগরের কাছাকাছি নিজেদের ঘরেই ছিলেন। অনেকেই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।
জরিপের বিশ্লেষন: কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content) সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ কার্য চালানোর সময় জানা গেছে, এরকম একটি সম্প্রচার কেন্দ্র সন্মন্ধে অনেকেরই ধারনা খুবই অস্পস্ট। এব্যপারে অনেকের কোনো রকম কোনো ধারনাই নেই। তবে বিষয়টি বুঝার পরে সবার মধ্যেই প্রচুর আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তারা সকলেই মত দেন যে এরকম একটি কেন্দ্র এলাকায় খুবই প্রয়োজন।
নোয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলের কয়েকটি এলাকায় মোট ২০জনের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। এখানে মাত্র দুজনের রেডিও এবং মাত্র এক জনের নিজস্ব একটি ছোট্ট টেলিভিশন ও রেডিও রয়েছে। তাদের অবশ্য খবর তেমন শুনা হয়না। রেডিওতে গান এবং টেলিভিশনে নাটক দেখা ও গানশুনা বেশী হয়। নারিদের শুধু নাটক ও গানই শোনা হয়। তবে পুরুষরা মাঝে মাঝে খবর শুনে থাকে। নারিদের মধ্যে খবর শুনার আগ্রহ খুব কম। গত সিডরের সময় পুরুষরা ১০০ শতাংশই রেডিও কিংবা টেলিভিশনে খবর পেয়েছেন কিন্তু ১০০ শতাংশ নারি বলেছেন তারা তাদের স্বামী কিংবা লোকমারফত খবর পেয়েছেন। ৮০শতাংশ বলেছেন তারা ঝড়ের পূর্বাভাষ পেয়ে নিজেদের জায়গায়ই অবস্থান করেন। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলেন বাড়ির নিরাপত্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। যেমন সেখানে কোথাও পানি বা বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের খুবই অসুবিধা পড়তে হয়। তাই অনেকেই সেখানে যেতে তেমন আগ্রহী হয়না। নিয়তির উপরও তারা অনেকাংশে নির্ভরশীল। ১০০ শতাংশ বলেছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়কালে তাঁরা আবহাওয়ার সংবাদ শুনতে চান। ১০০ শতাংশ বলেছেন তাদের অনুষ্ঠান দেখতে সবচেয়ে বেশী আগ্রহ নাটকের প্রতি । তবে বাংলা সিনেমার প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন, কমিউনিটি রেডিও স্থাপিত হলে শিক্ষার উপর সবচেয়ে বেশী অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেয়া উচিত। অন্য ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন শাসন না করলে শিশুদের পড়াশুনা হয়না। তবে তারা এও জানিয়েছেন এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়। এ বিষয়ে শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠান প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা তারা জানিয়েছেন। ১০০ শতাংশ জানিয়েছেন বয়ো:সন্ধিকালীন সময়ে মেয়েদের সমস্যা বিষয়ক সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান বিশেষ ভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে। সবাই মনে করেন এ ব্যপারে মেয়েরা এমন কি অভিভাবকরাও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নন। এ নিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক দ্বিধা কাজ করে। অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন। এথেকে মেয়েরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিষয়ে ১০০শতাংশ জানিয়েছেন মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, সাধারন রোগবালাই, ডায়রিয়া, খাদ্যে পুষ্টিমান, টিকা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা মুলক অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। তবে মাত্র এক জন এইড্‌স বিষয়ে অনুষ্ঠান করার কথা জানিয়েছেন। বাসস্থান বিষয়ে ৭৫শতাংশ জানিয়েছেন, ভূমি ও ভূমির অধিকার বিষয়ে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। অবশ্য এ ব্যপারে পুরুষরাই বেশী আগ্রহী। নোয়াখালীতে তাঁত শিল্পের তেমন কোনো প্রসার নেই। এবিষয়ে কারো তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে ১০০শতাংশই হস্তশিল্প ও নারিদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করার কথা বলেছেন। একজন মন্তব্য করেন এক সময় নোয়াখালীতে প্রচুর তাঁতের প্রসার ছিলো । কিন্তু কালের গর্ভে তা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানে স্থানে যুগীপাড়া ছিলো। সেখানে লুঙ্গি গামছা শাড়ি এসব স্থানীয় ভাবে তৈরী হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও এগুলো বাইরের জেলা গুলোতে চালান হতো। কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে পারলে সেগুলো হয়তো আবার চালু হবে। আশা করা যায় এ থেকে তখন হয়তো এ এলাকার অনেক উন্নতি সাধিত হবে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন কৃষিঋণ, সার, বীজ, উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ, হাঁস মুরগি পালন, কীটনাশক ছাড়া সব্জী চাষ, খাদ্যে পুষ্টিমান ইত্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যম হওয়া উচিত নাটক, কথিকা, জীবন্তিকা ইত্যাদির মাধ্যমে। এরা আরো জানিয়েছেন স্থানীয় ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে সবার কাছে তা গ্রহনযোগ্য হবে। এছাড়াও স্থানীয় ভাষায় নাটক, গান এবং স্থানীয় সমস্যা ও সমাধান ইত্যাদি বেশী বেশী প্রচার হওয়া দরকার বলে সবাই জানিয়েছেন।
উপসংহার:- সার্বিক জরিপে দেখা যায় এ এলাকার জন্য কমিউনিটি রেডিওর অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দুর্গম এ অঞ্চলের মানুষ কাছের খবরটিও সঠিক ভাবে পায়না। কথায় কথায এলাকাবাসী জানায়, ‘‍ইরােক েবামায় মানুষ মরার খবর আমরা সাথে সাথে রেডিও টেলিভিশনে পাই কিন্তু পাশের গ্রামে মড়ক লেগে হাঁসমুরগী মারা গেলে আমরা তার খবর পাইনা‍ অথচ এটি আমাদের জন্য অধিকতর জরুরী’। এখানে এটি স্থাপিত হলে শুধু দুর্যোগকালীন সময়েই নয়, এ কেন্দ্র গ্রামীণ জনগণের সার্বক্ষনিক দিনযাপনের অনুসঙ্গ হয়ে থাকেব। স্থানীয় ভাষায় স্থানীয় আঙ্গিকে স্থানীয় সমস্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে এটি জনগনের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করবে এবং অধিক গ্রহনযোগ্যতা পাবে। এলাকায় সচেতনতা বাড়বে। উপকৃত হবে প্রান্তিক মানুষ।

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
মোবাইল: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@gmail.com

Mail to : massline@bangla.net
masslinemediacenter@yahoo.com



 
সকল সত্ব সংরক্ষিত সকল সত্ব সংরক্ষিত সকল সত্ব সংরক্ষিত This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free