রৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৌদ্ররৃষ্টিরৌদ্ররৃষ্টি রৌদ্রবৃষ্টি রৌদ্রবৃষ্টি রোদ্রবৃষ্টি
   
 
  বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর কিশোরীদের সেবাযত্












মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর কিশোরীদের সেবাযত্ন

 

বয়ঃসন্ধি কালে কিশোর কিশোরীদেরকে অনেকেই বুঝতে পারেনা। এ সময় তদের শুরু হয় নানান শারীরিক মানসিক পরিবর্তন। আচার আচরনে এরা কখনো হয় একরোখা আবার কখনো নিজেদেরকে আড়াল করে লুকিয়ে রাখে। পাড়াপড়শী সমাজ এমনকি বাবা মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও এদের আচরনকে আড় চোখে দেখে থাকে। এ সময়টিকে কিভাবে উত্তরণ করবে, সে উপদেশ গুলোও তারা কারো কাছে পায় না। পাঠ্যপুস্তকেও এ বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই। অনেক অভিভাবক এ বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে আলাপচারিতা করতে কুন্ঠা বোধ করেন। তাঁরা মনে করেন এ সময়টি স্বাভাবিক ভাবেই কিশোর কিশোরীরা পার করে দেবে। এ নিয়ে তাদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন নেই। গণমাধ্যম বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ম্যাসলাইন মিডিয়া সেন্টার(এমএমসি) আয়োজিত ও আর্টিকেল-১৯ এর সহায়তায় ‘বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যা’ বিষয়ক এক গবেষণায় এ তথ্যগুলো পাওয়া গেছে। এর কার্যক্রম হিসাবে নোয়াখালীর তিনটি স্কুলে অংশগ্রহণমূলক কর্মগবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। এর জন্য নোয়াখালী শহর, গ্রাম ও শহরতলীর তিনটি স্কুলকে বাছাই করা হয়েছে। প্রতিটি স্কুলে রয়েছে সহ-শিক্ষা বা কো-এডুকেশন। প্রতিটি স্কুল থেকে ১২জন করে শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়েছে। দুটি স্কুল থেকে নেয়া হয়েছে ১২ জন করে মোট ২৪জন কিশোরী এবং একটি স্কুল থেকে নেয়া হয়েছে ১২ জন কিশোর। প্রতিটি স্কুলে এই ১২ জনকে নিয়ে গ্রুপ করা হয়েছে। আবার স্কুলের এই শিক্ষার্থীদের অবিভাবকদের নিয়ে ১২ জন করে এক একটি গ্রুপ করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনটি স্কুলের ১২ জন করে তিনটি গ্রুপ এবং ঐ শিক্ষার্থীদের ১২ জন অভিবাবক নিয়ে তিনটি গ্রুপ। শিক্ষার্থী ও অভিবাবক নিয়ে আলাদা করে মোট ৬টি গ্রুপ করা হয়েছে। এদের প্রত্যেকের সাথে আলাদা আলাদা করে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ৩টি করে মোট ১৮টি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিলো। কর্মশালার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছিলো অংশগ্রহনমূলক কর্মগবেষণা পদ্ধতি। যারা এই কর্মগবেষণায় অংশগ্রহন করে তারাই মূলতঃ এর গবেষক। যে সব স্কুলে গবেষণার কর্মশালা করা হয়েছিলো সে গুলো হলো,নোয়াখালী পৌরসভার এম,এ,সাত্তার উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াখালী সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এবং বেগমগঞ্জ উপজেলার শরিফ পুর ইউনিয়নের হাসান হাট উচ্চ বিদ্যালয়। এবছর আগষ্টের ১৫ তারিখ থেকে প্রায় এক মাস এ গবেষণাটি পরিচালিত হয়।
বয়ঃসন্ধি কাল মানুষেরে জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময়। এবয়সে একটি ছেলে বা মেয়ে প্রবেশ করে এক অজানা জগতে। চরম কৌতুহল নিয়ে সে দেখে তার চারদিকের পৃথিবীকে। এ সময় তার শারিরীক ও মানসিক অভুতপূর্ব পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু আমাদের দেশের সামাজিক প্রোপটে এ সময়টা থাকে সবচেয়ে বেশী উপেক্ষিত। কিশোর কিশোরীরা অজ্ঞতার কারনে সঠিক পরিচর্যা পায়না। শহর ও গ্রামের এলাকা ভেদে এদের চাল চলনের ধরণ হয় আলাদা। সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই এরা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে। অভিভাবকরাও এ বয়সকে সহজ চোখে দেখতে চান না। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা থাকেন একেবারে উদাসিন। আবার মেধা বিকাশেও চরম বাধার সম্মুখে পড়তে হয় এদের। তখন নষ্ট হয় উজ্জল সম্ভাবনা। জাতি হয় ক্ষতিগ্রস্ত।
এ পরিপ্রেক্ষিতে নোয়াখালী জেলার শহর শহরতলী ও গ্রাম পর্যায়ের তিনটি স্তরের এই কিশোর কিশোরীদের বিভিন্ন সমস্যা ও এর সমাধানের পথ অনুসন্ধান এবং তাদের অবিভাবকদের মানসিকতা পর্যালোচনা করাই ছিলো এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
মানুষের জীবনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। যেমন - ছোটবেলা একরকম, কিশোর বয়সে একরকম, আবার বড় হয়ে যাওয়ার পর অন্যরকম। তবে, সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন আসে কৈশোরে। শিশুকাল আর যৌবনের মাঝামাঝি সময়কে বয়ঃসন্ধি কাল বা কৈশোরকাল বলে। এরা কিশোর কিশোরী। এ বয়সে এরা আরো বেশি বুঝতে শেখে। অনুভব করতে শেখে, বাইরের পৃথিবী এবং জীবন সম্পর্কে আরো বেশি জানতে চায়।
১০ বছর থেকে ১৯ বছর পর্যন্ত সময়কে বলে বয়ঃসন্ধি কাল। কেউ বলে উঠতি বয়স। শরীরের গঠন আর পুষ্টির উপর ভিত্তি করে সাধারণত ১০-১২ বছর বয়সে এদের শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়।
এ সময় কিশোর-কিশোরীরা দ্রুত বেড়ে উঠে। একেক জনের শরীর যেহেতু একক রকম। তাই কেউ বড় হয় তাড়াতাড়ি আর কেউ বা একটু দেরীতে। দেহের চাহিদা অনুযায়ী এ সময়ে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করলে শরীরের বৃদ্ধি পুরোপুরি হয়।
এ বয়সে ছেলেদের উচ্চতা বাড়ে, কাঁধ চওড়া হয়, মাংসপেশী শক্ত হতে থাকে। মুখে দাড়ি গোঁফ গজাতে শুরু করে ও কন্ঠস্বরের পরিবর্তন হয়।
মেয়েদের শরীর ও এ বয়সে বাড়তে থাকে। মেয়েলি পরিবর্তনগুলো শুরু হয় এবং চেহারায় লাবন্য আসে। এই পরিবর্তনগুলি হচ্ছে একটি ছেলে বা মেয়ের বড় হওয়ার লণ। বয়ঃসন্ধিকাল মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক পরিবর্তন ঘটার ফলে মানসিক পরিবর্তনও শুরু হয়। এ সময় তাদের মনে নানা প্রশ্ন উঁকি দেয়। মন চঞ্চল হয়ে উঠে। মনের ভিতর দ্বিধা দ্বন্দ্ব আর আবেগ অস্থিরতা বেশি কাজ করে। এসময় ছেলেমেয়েরা নিজেদের বড় ভাবতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবে এ বয়সে তারা শরীর, চেহারা, পোশাক ও আচার-আচরণ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠে। কখনো মন বিষন্ন হয়ে উঠে আবার কখনো মন খুশিতে ভরে যায়। এসময় অনেকে একা থাকতে চায়। কারো সাথে মিশতে চায় না।
তাদের মনে স্বাধীন ও স্বনির্ভর হওয়ার ভাবনা আসে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের সাথে বাবা-মা ও পরিবারের আচরনের তারতম্য বেশি দেখা যায়।
আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়েদের সমান চোখে দেখা হয় না এবং তাদের সাথে একই রকম ব্যবহার করা হয় না। জন্মের পর থেকে মেয়েরা বিভিন্ন ভাবে বৈষম্যের শিকার হয়।
এসময় মেয়েরা নিরাপত্তার অভাবে ভোগে। কেউ কেউ এ সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। অনেক সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক ছেলে বা মেয়ে মানসিকভাবে কষ্ট পায়। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং স্বাভাবিক হতে পারে না।
তাই এসময় নিজের চিন্তা এবং সমস্যাগুলি যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আলাপ করে নেয়া যায় এবং সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী করা যায়। তাহলে বিভিন্ন সমস্যা সহজে সমাধান করা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে গবেষণায় কিশোর কিশেরী ও অভিবাবকদের কাছ থেকে নানান চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায়। গবেষকদের কাছে এক কিশোর জানায় “আমাদেরকে আমাদের বাবা মায়েরা মোটেও বুঝতে চায়না। কিছু না বুঝেই তাঁরা অনেক সময় মারধর করেন। তখন মনটা খুব ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সমাজ ও আমাদেরকে বাঁকা চোখে দেখে। আমরা চাই আদর স্নেহ মায়া মমতা। কিন্তু আমরা কখনো তা পাইনা। ছোট ছোট কাজে আমাদেরকে কেউ প্রশংসা করেনা”। এসময় নানান শারিরীক পরিবর্তনের কথা লজ্জায় কারো সাথে তারা আলোচনা করেনা। মাঝে মাঝে একান্ত বন্ধুদের সাথে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে। গোপন অঙ্গে কোনো অসুখ হলে লজ্জায় তারা বাবা মায়ের সাথে কথা বলতে চায়না। মেয়েরা আরো জানায়, মায়েদর কাছে তারা আশ্রয় পশ্রয় বেশী পায়, আবার বাবাদের তুলনায় তারাই বেশী মার ধর  করেন। ছেলেরা জানায়, বার তের বছর বয়সে সকলেরই স্বপ্নদোষ হতে শুরু করেছে। এ সময় তারা অনেকেই নিয়মিত হস্তমৈথুনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই সমকামিতার আভিজ্ঞতা রয়েছে।
কিশোরীরা জানায়, ১০-১৩ বছর বয়সে তাদের ঋতুস্রাব হয়েছে। অনেকেরই এ বিষয় আগে কোনো ধারণা ছিলোনা। তাই প্রথম তারা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। মেয়েরা জানায়, অনেক জটিল রোগে তারা ভুগলেও লজ্জায় ডাক্তারের কাছে যায়না। আনেক সময় বেদেদের কাছ থেকে টোটকা ঔষধ নিয়ে থাকে। তারা জানায়, ‘স্কুলে ফাষ্টএইড বক্স’ এবং ঋতুকালীন সময়ের জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা থাকা উচিৎ।
অনেক অভিভাবক জানিয়েছেন, তারা কেউ কেউ খেয়াল রাখতে চাইলেও অনেক সময় হয়ে উঠেনা। বয়ঃসন্ধিকালীন বিষয় নিয়ে তাঁরা কেউ তেমন ভাবনা চিন্তা করেননা। মায়েদের সঙ্গেই সন্তানদের সম্পর্ক ভালো।
কিশোর কিশেরীরা জানায়, মানসিক ভাবে তারা বিপরিত লিঙ্গের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করে। পড়া লেখায় এ সময় অনেকেরই মনোযোগ নেই। তারা জানায়, স্কুলের পাঠ্য সূচীতে বয়ঃসন্ধিকালীন বিষয়টি থাকা খুবই প্রয়োজন।
গবেষণাটি সম্পন্ন করেছেন সাংবাদিক ও গবেষক মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
Mahmudul Huq Foez
 
আপনজন
 
ভালোবাসার একটি গোলাপ
সাতরাজারই ধন,
কোথায় খুঁজিস ওরে ক্ষেপা
এইতো আপন জন।
নীরবতা
 
নীরবে কেটেছে দিবস আমার
নীরবে কেটেছে রাত,
নীরবে হেনেছে হৃদয় আমার
প্রণয়ের অভিসম্পাত।
রঙ
 
রঙ দেখেছো রঙ ?
শাওন রাতের
নিকষ কালো
অন্ধকারের রঙ !
রঙ দেখেছো রঙ !
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
 
কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content)
সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ
মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ

উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী একটি দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে পরিচিত। নোয়াখালী সদরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই চর এলাকা। এখানে বাস করে সাধারন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। তাছাড়াও দিনমজুর, রিক্সাশ্রমিক, জেলে প্রভৃতি পেশার মানুষ এখানে বাস করে। খুব কমসংখ্যক নারি কৃষি সহ বিভিন্ন কাজ করলেও তারা মূলত ঘরকন্যার কাজ করে থাকে। ঘর কেন্দ্রিক নানান কাজের সঙ্গেও এরা জড়িত। এইসব নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে শিক্ষার হার খুব কম। জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতনতাও এদের তেমন নেই। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় এরা বেশীরভাগ সময়ে সনাতন জ্ঞান, নিজস্ব ধারনা এবং আকাশের হাবভাব দেখে বুঝতে চেষ্টা করে। প্রায় ক্ষেত্রে এরা নিয়তির উপর নিজেদেরকে সমর্পন করে থাকে। তবে গত কয়েক বছরের বড় ধরনের ঝড় জলোচ্ছাস ও সাম্প্রতিক সিডরের কারনে এদের ভিতর কিছুটা সচেতনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এদের অধিকাংশের বাড়িতে রেডিও কিংবা টেলিভিশন নেই। তবে তারা স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে রেডিও টেলিভিশন থেকে খবরাখবর পেয়ে থাকে।
গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে অনেক গুলো বড় বড় ঝড় জলোচ্ছাস গর্কী সহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বয়ে গিয়েছিলো। সে দুর্যোগ গুলোতে প্রচুর প্রাণহানি ও সম্পদের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ‘৫৮.’৬০, ও ‘৭০ এর জলোচ্ছাস এ অঞ্চলে ব্যপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো। সে সময় এখানকার মানুষ কোনো মাধ্যম থেকে কেনো সংবাদই পেতোনা। সে সময়ের সরকার গুলোও ছিলো এব্যপারে একেবারেই উদাসীন।
নোয়াখালী সদরের সর্বদক্ষিনে হাতিয়া ষ্টিমার ঘাট ও অতিসম্প্রতি বয়ার চরের সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলে ফেরী চলাচলের জন্য চেয়ারম্যান ঘাট নামক স্থানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌপরিবহন সংস্থার একটি পল্টুন স্থাপিত হয়েছে । এখানে হাতিয়া দ্বীপ ও নোয়াখালীর মূল ভূখন্ডের মধ্যে ফেরি যোগাযোগ রয়েছে । এ এলাকায় মেঘনার মোহনায় প্রচুর সমুদ্রগামী মাছ ধরার ট্রলার ও ছোটছোট জেলে নৌকা এসে ভীড়ে থাকে । এই ফেরীঘাটের সুবাদে এখানে একটি জমজমাট বাজার গড়ে উঠেছে। এখানের অনেক জেলে জানিয়েছেন, তাদের অনেকেরই নিজস্ব কোনো রেডিও নেই। যারা চরের কাছাকাছি থেকে সাধারনত: মাছ ধরে থাকে। ছোট নৌকা নিয়ে তারা কখনো গভীর সমুদ্রে যায় না। কখনো কোনো দুর্যোগ দেখলে নদীর হাবভাব বুঝে সাবধানতা অবলম্বন করে। সারাদিন মাছ ধরা শেষে রাতে তারা চেয়ারম্যান ঘাটে কিংবা হাতিয়া ষ্টিমার ঘাটে আসলে লোকমুখে বিভিন্ন সংবাদ পেয়ে থাকে। নদীর কূলের এ বাজার গুলোতে এখন রেডিও তেমন শুনা হয়না। চা দোকান গুলোতে টেলিভিশন আছে । তাই সেখানে কাষ্টমারের ভীড় লেগে থাকে। যে দোকানে টেলিভিশন নেই সে দোকানে লোকজন তেমন যায় না। এসব দোকান গুলোতে বেশীর ভাগ সময় নাটক ও সিনেমা বেশী দেখা হয়। তবে দুর্যোগকালীন সময় সংবাদ বেশী দেখা হয়। এলাকার মানুষদের বদ্ধমূল ধারনা জন্মেছে যে, রেডিও টেলিভিশনে জাতীয় সংবাদ ছাড়া স্থানীয় সংবাদ প্রচারিত হয়না। তাই তারা খুব প্রয়োজনীয় তথ্য ও স্থানীয় সংবাদ গুলো লোকমারফত পেয়ে থাকে। তবে তা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক হয়না। দুর্গম অঞ্চলের অনেক মানুষ জানিয়েছেন গত সিডরের সময় তারা লোকমুখে সংবাদ পেয়েছিলেন। সাগরের অবস্থা দেখে তারা সাগর থেকে ডাঙ্গায় চলে এসেছেন, তবে অনেকে উপরে সাগরের কাছাকাছি নিজেদের ঘরেই ছিলেন। অনেকেই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি।
জরিপের বিশ্লেষন: কমিউনিটি রেডিও’র অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তু (content) সম্পর্কে অংশগ্রহণমূলক জরিপ কার্য চালানোর সময় জানা গেছে, এরকম একটি সম্প্রচার কেন্দ্র সন্মন্ধে অনেকেরই ধারনা খুবই অস্পস্ট। এব্যপারে অনেকের কোনো রকম কোনো ধারনাই নেই। তবে বিষয়টি বুঝার পরে সবার মধ্যেই প্রচুর আগ্রহের সৃষ্টি হয়। তারা সকলেই মত দেন যে এরকম একটি কেন্দ্র এলাকায় খুবই প্রয়োজন।
নোয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে সমুদ্র উপকূলের কয়েকটি এলাকায় মোট ২০জনের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। এখানে মাত্র দুজনের রেডিও এবং মাত্র এক জনের নিজস্ব একটি ছোট্ট টেলিভিশন ও রেডিও রয়েছে। তাদের অবশ্য খবর তেমন শুনা হয়না। রেডিওতে গান এবং টেলিভিশনে নাটক দেখা ও গানশুনা বেশী হয়। নারিদের শুধু নাটক ও গানই শোনা হয়। তবে পুরুষরা মাঝে মাঝে খবর শুনে থাকে। নারিদের মধ্যে খবর শুনার আগ্রহ খুব কম। গত সিডরের সময় পুরুষরা ১০০ শতাংশই রেডিও কিংবা টেলিভিশনে খবর পেয়েছেন কিন্তু ১০০ শতাংশ নারি বলেছেন তারা তাদের স্বামী কিংবা লোকমারফত খবর পেয়েছেন। ৮০শতাংশ বলেছেন তারা ঝড়ের পূর্বাভাষ পেয়ে নিজেদের জায়গায়ই অবস্থান করেন। এর কারণ হিসাবে তাঁরা বলেন বাড়ির নিরাপত্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। যেমন সেখানে কোথাও পানি বা বাথরুমের ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে বিশেষ করে মেয়েদের খুবই অসুবিধা পড়তে হয়। তাই অনেকেই সেখানে যেতে তেমন আগ্রহী হয়না। নিয়তির উপরও তারা অনেকাংশে নির্ভরশীল। ১০০ শতাংশ বলেছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়কালে তাঁরা আবহাওয়ার সংবাদ শুনতে চান। ১০০ শতাংশ বলেছেন তাদের অনুষ্ঠান দেখতে সবচেয়ে বেশী আগ্রহ নাটকের প্রতি । তবে বাংলা সিনেমার প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন, কমিউনিটি রেডিও স্থাপিত হলে শিক্ষার উপর সবচেয়ে বেশী অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। ৭০ শতাংশ জানিয়েছেন আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দেয়া উচিত। অন্য ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন শাসন না করলে শিশুদের পড়াশুনা হয়না। তবে তারা এও জানিয়েছেন এর মাত্রা যেন অতিরিক্ত না হয়। এ বিষয়ে শিশুদের উপযোগী অনুষ্ঠান প্রচারের প্রয়োজনীয়তার কথা তারা জানিয়েছেন। ১০০ শতাংশ জানিয়েছেন বয়ো:সন্ধিকালীন সময়ে মেয়েদের সমস্যা বিষয়ক সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান বিশেষ ভাবে প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে। সবাই মনে করেন এ ব্যপারে মেয়েরা এমন কি অভিভাবকরাও এ বিষয়ে তেমন সচেতন নন। এ নিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক দ্বিধা কাজ করে। অনেকেই এ বিষয়ে কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন। এথেকে মেয়েরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিষয়ে ১০০শতাংশ জানিয়েছেন মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, সাধারন রোগবালাই, ডায়রিয়া, খাদ্যে পুষ্টিমান, টিকা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা মুলক অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। তবে মাত্র এক জন এইড্‌স বিষয়ে অনুষ্ঠান করার কথা জানিয়েছেন। বাসস্থান বিষয়ে ৭৫শতাংশ জানিয়েছেন, ভূমি ও ভূমির অধিকার বিষয়ে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার। অবশ্য এ ব্যপারে পুরুষরাই বেশী আগ্রহী। নোয়াখালীতে তাঁত শিল্পের তেমন কোনো প্রসার নেই। এবিষয়ে কারো তেমন কোনো আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। তবে ১০০শতাংশই হস্তশিল্প ও নারিদের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করার কথা বলেছেন। একজন মন্তব্য করেন এক সময় নোয়াখালীতে প্রচুর তাঁতের প্রসার ছিলো । কিন্তু কালের গর্ভে তা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জেলার বিভিন্ন জায়গায় স্থানে স্থানে যুগীপাড়া ছিলো। সেখানে লুঙ্গি গামছা শাড়ি এসব স্থানীয় ভাবে তৈরী হতো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও এগুলো বাইরের জেলা গুলোতে চালান হতো। কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে পারলে সেগুলো হয়তো আবার চালু হবে। আশা করা যায় এ থেকে তখন হয়তো এ এলাকার অনেক উন্নতি সাধিত হবে।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন কৃষিঋণ, সার, বীজ, উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ, হাঁস মুরগি পালন, কীটনাশক ছাড়া সব্জী চাষ, খাদ্যে পুষ্টিমান ইত্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা প্রয়োজন।
১০০শতাংশ জানিয়েছেন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যম হওয়া উচিত নাটক, কথিকা, জীবন্তিকা ইত্যাদির মাধ্যমে। এরা আরো জানিয়েছেন স্থানীয় ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে সবার কাছে তা গ্রহনযোগ্য হবে। এছাড়াও স্থানীয় ভাষায় নাটক, গান এবং স্থানীয় সমস্যা ও সমাধান ইত্যাদি বেশী বেশী প্রচার হওয়া দরকার বলে সবাই জানিয়েছেন।
উপসংহার:- সার্বিক জরিপে দেখা যায় এ এলাকার জন্য কমিউনিটি রেডিওর অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দুর্গম এ অঞ্চলের মানুষ কাছের খবরটিও সঠিক ভাবে পায়না। কথায় কথায এলাকাবাসী জানায়, ‘‍ইরােক েবামায় মানুষ মরার খবর আমরা সাথে সাথে রেডিও টেলিভিশনে পাই কিন্তু পাশের গ্রামে মড়ক লেগে হাঁসমুরগী মারা গেলে আমরা তার খবর পাইনা‍ অথচ এটি আমাদের জন্য অধিকতর জরুরী’। এখানে এটি স্থাপিত হলে শুধু দুর্যোগকালীন সময়েই নয়, এ কেন্দ্র গ্রামীণ জনগণের সার্বক্ষনিক দিনযাপনের অনুসঙ্গ হয়ে থাকেব। স্থানীয় ভাষায় স্থানীয় আঙ্গিকে স্থানীয় সমস্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচারিত হলে এটি জনগনের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করবে এবং অধিক গ্রহনযোগ্যতা পাবে। এলাকায় সচেতনতা বাড়বে। উপকৃত হবে প্রান্তিক মানুষ।

মাহ্‌মুদুল হক ফয়েজ
ফ্রি-ল্যান্স সাংবাদিক
মোবাইল: ০১৭১১২২৩৩৯৯
e-mail: mhfoez@gmail.com

Mail to : massline@bangla.net
masslinemediacenter@yahoo.com



 
সকল সত্ব সংরক্ষিত সকল সত্ব সংরক্ষিত সকল সত্ব সংরক্ষিত This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free